সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
কার্তিক বাবুর কার্তিক পুজো
সমাজ বসু
কালীপুজোর ঠিক পরে পরেই শ্বশুরবাড়ির সূত্রে লাখ ছয়েক টাকা পাওয়ার একটা জোরালো আভাস পেয়েছেন কার্তিক বাবু। কার্তিক চন্দ্র বারুই। বছরখানেক হল তিনি রাজ্যসরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে অবসর নিয়েছেন। ভোজনরসিক হিসেবে পাড়ায় তাঁর বিশেষ সুনাম। কিন্তু এইরকম একটা নাদুসনুদুস চেহারায় তাঁর বড় সাধ পাড়ার কোনও অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তাঁর এই মনের ইচ্ছে এতদিন মনের ভেতরেই গুমরে ছিল। এইবার তিনি মনস্থ করেছেন,লাখ ছয়েক টাকার থেকে লাখখানেক টাকা কার্তিকপুজোর উদ্দেশ্যে খরচ করবেন এবং তিনি পুজো কমিটির সভাপতি হবেন। পাড়ার উঠতি ছেলেগুলোকে এই বলে উসকে দিলেন যে এই বছর পাড়ায় কার্তিক পুজো করে সব্বাইকে তাক লাগিয়ে দেবার কথা ভাবছি। কারও স্থায়ী রোজগার নেই,সময় যেন কাটতেই চায় না।তাই তারাও এককথায় রাজি হয়ে গেল। পুজোর সুবাদে খরচের কিছু পয়সা যদি পকেটে আসে মন্দ কি?তাছাড়া তারা জানে কার্তিক বাবু খাইয়ে মানুষ। খাওয়ানোয় তাঁর কোন কৃপণতা নেই। ভাসান অবধি দু বেলা পেটেরও কোন চিন্তা করতে হবে না।
আজ রবিবার। সন্ধ্যে ছটায় পাড়ার ছেলেদের নিয়ে মিটিংএ বসবেন কার্তিক বাবু। পুজোর খুঁটিনাটি সব আলোচনা হবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ছেলেরা আসতে শুরু করেছে। ছেলেদের জন্য এলাহী জলখাবারের ব্যাবস্থা। চাউমিন,মোমো,চিকেনটিকিয়া সঙ্গে কোল্ড ড্রিঙ্কস।
--- তোমরা সবাই নিজেদের ভেতর ঠিক করে নাও,কে কোন্ কাজের ভার নেবে। তারপর আলাদা আলাদা করে টাকা ভাগ করে দেব।
-- পুজোর লাইটিং এর ব্যাবস্থাটা আমরাই করব। শিবু আর নাড়ু বেশ জোরের সঙ্গেই বললো।
--- প্যান্ডেলটা আমাদের ওপরেই ছেড়ে দিন। কিন্তু,জেঠু আমরা একটা কথা ভাবছি। জিতেন আর বাবুলকে চিন্তিত দেখে কার্তিক বাবু জিগ্ঞেস করলেন,ভাবছটা কি?
-- আমরা থিমের কথা ভাবছি। এখন তো পুজো মানেই থিম।
--- ভাবনাটা অমূলক নয়।
--- কার্তিক পুজোয় থিম। এ তো লোক হাসানো ব্যাপার হয়ে যাবে। সজলের কথায় রাজুও সায় দেয়।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কার্তিক বাবু বললেন,থিম একটা পেয়েছি। সারোগেট ফাদার।
--- সেটা আবার কি? সবাই জানতে চাইল।
-- সারোগেট ফাদার হল,একক পিতৃত্ব। আজকাল একক মাতৃত্ব বা একক পিতৃত্বের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। মানুষ খাচ্ছেও খুব। সব যুগের হাওয়া।
কার্তিক বাবুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে নাড়ু প্রশ্ন করে বসল,মা ছাড়া শুধু বাবার কাছে সন্তান মানুষ হবে,এ কিভাবে সম্ভব?
-- সে অনেক ব্যাপার,পরে সব বুঝিয়ে বলব। এই পুজোয় বিষয়টাকে জুড়ে দেওয়ার বিশেষ কারণ আছে। আমাদের ছোটবেলায় মনে আছে, কোন দম্পতির বিয়ের দু চার বছর পরেও সন্তানের জন্ম না হলে তাদের বাড়ির বারান্দা কিংবা উঠোনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি চুপিসারে রেখে আসা হতো। আর সেই মূর্তি পুজোর কল্যাণে দম্পতির মনের সাধ পূর্ণ হতো।তখন এইরকমটাই বিশ্বাস আর জনশ্রুতি ছিল। এখন খোদ শহরে না হলেও, গ্রামে গঞ্জে সেই প্রথা চালু আছে।
-- থিমটার মধ্যে বেশ একটা চমক আছে তাই না? হাবুলের কথায় সবাই ঘাড় নাড়ে।
-- মূর্তি বাবদ দশ হাজার ধরেছি,হবে না?
-- হবে না মানে! সারা কুমোরটুলিতে অত দামে কার্তিক ঠাকুর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। কলকাতার বুকে ক'টা কার্তিক পুজো হয় বলুন তো? ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনের বাঁশবেড়িয়া,গুপ্তিপাড়ায় কিছু নামী পুজো হয় শুনেছি। নব কার্তিক, শিশু কার্তিক,জামাই কার্তিক আরও কত সেই সব নাম। তবে চিন্তা করবেন না, সকাল সকাল বেরিয়ে একটু খুঁজতে হবে।
-- জেঠু,পুরো প্যান্ডেলটা আলোয় মুড়ে দিতে হবে কিন্তু। মোমোয় কামড় বসিয়ে শিবু বলল।
-- তোদের মা মন চায় করবি। আমার দিকে থেকে কোন আপত্তি নেই। ভুড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে তিনি সবাইকে নিশ্চিন্ত করলেন।
সূর্যনগর খেলার মাঠে সাতসকালে দু লরি বাঁশ নামতে দেখে পাড়ার সবাই হতবাক। মনে হচ্ছে বিশাল এক প্যান্ডেলের আয়োজন চলছে। দুর্গা,লক্ষী,কালী,গনেশ মায় জগদ্ধাত্রী পুজোও তো শেষ। এই নভেম্বরের মাঝামাঝি এ কোন পুজোর ম্যারাপ বাঁধা হচ্ছে? একজন বয়স্ক প্রতিবেশী বাঁশগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,তাহলে কি দেব সেনাপতি কার্তিক আসছেন আমাদের পাড়ায়? তাঁর কথায় সবাই উপেক্ষার হাসি হাসল বটে, কিন্তু কথাটার সত্যতা প্রমাণিত হতে বেশি সময় লাগল না। মুহুর্তের মধ্যে সজল আর রাজু মারফত কার্তিক পুজোর কথাটা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল সারা পাড়ায়।আর গোটা পাড়ায় আনন্দ ও আবেগের পরিবর্তে বিষ্ময়ই ভেসে বেড়াল। সকলেই প্রায় আশ্চর্য আর হতবাক। পাড়ার মোড়ে মোড়ে যেভাবে কাঠের গুঁড়ি পোঁতা হচ্ছে,মনে হয় আলোর তোরণ তৈরি হবে। যা দুর্গা পুজোয় হয়ে থাকে।
পুজোর তোড়জোড় যখন তুঙ্গে, ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটল অঘটন। দুঃসংবাদটা কার্তিক বাবু নিজেই পাড়ার ছেলেদের শোনালেন। আইনী জটিলতার কারণে, তাঁর শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তির এই মুহূর্তে কোনও নিষ্পত্তি হবে না।আইনী জটিলতা কাটতে আরও মাস দুয়েক লাগবে। তিনি আরো বললেন, কোনরকমে নমো নমো করে পুজো সারতে রাজি নন। তাই একবছর অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। এইরকম চরম সিদ্ধান্তে পৌঁছে তিনি ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভেঙে পড়লেন।
পাড়ার ছেলেরা এই আকষ্মিক ঘটনায় মুষরে পড়লেও,তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, কার্তিক বাবুর মত একজন নিঃসন্তান সদাচারী মানুষের পাশে তাদের থাকা উচিত। তাঁর পুজো কমিটির সভাপতি হওয়ার তীব্র বাসনার সঙ্গে হয়ত নিজের বংশ রক্ষার তাগিদেই তিনি কার্তিক পুজোর আয়োজন করেছিলেন। সূর্যনগর খেলার মাঠে পুজো না হলেও, কার্তিক বাবুর ইচ্ছে পূরণ করতে হবে। সবাই মনস্থ করল, তাদের হাতে পুজোর খরচ বাবদ অগ্রিম কিছু টাকা আছে। সেই টাকায় একটা ছোট কার্তিক ঠাকুর কিনে, পুজোর আগের মাঝরাতে তাঁর বাড়ির দরজায় রেখে দেওয়া হবে। তারপর বাধ্যতামূলক ভাবে কার্তিক পুজোর কল্যাণে, ষাটোর্ধ কার্তিক বাবুর যদি বংশ রক্ষা হয়, তাহলে সকলে মিলে দেব সেনাপতি কার্তিক ঠাকুরের সঙ্গে কার্তিক বাবুরও জয়ধ্বনি করবে তারা।
Subscribe to:
Posts (Atom)
0 comments:
Post a Comment