সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 ঠাকুমা ও একটি কমলালেবু

মিতা ঘোষ


শীতে বড় কষ্ট পাচ্ছে পাকড়াশীদের ঠাকুমা। বলতে নেই, বয়সটাও তো কম নয়। না ভালো খাবার, না ভালো পরা… তারপরও যে কিভাবে প্রাণটুকু টিঁকে আছে, ভাবলে অবাক লাগে! গরীব ঘরে বাচ্চাকাচ্চাদেরই পেটে খাবার, গায়ে ত‍্যানা ওঠেনা। কে ওই নবতিপর বুড়ির খেয়াল রাখবে? 

বুড়ি কোঁকায়। জাড়ে কোঁকায়, খিদেয় কোঁকায়। মাঝে মাঝে হাউমাউ করে ওঠায় নাতি এসে আরো দুই ঘা দিয়ে যায়। সে কি একা উপোস দিচ্ছে না কি তাই? বাড়িসুদ্ধু লোকে দুদিন ধরে মুড়ির উপর আছে দেখতে পায়না বুড়ি? এত লোক মরে, তার মরণ নেই? বাবা, মা সবাই কবে উপরে চলে গেছে! অথচ যাবার সময় বাপের এই পিসিকে ছেড়ে গেছে নাতি মুকুলের উপর। যে কিনা চার চারটে বাচ্চা আর বউয়ের পেট কি করে ভরবে, ভেবেই পায়না। বুড়ি মরলে বাঁচে মুকুল।

আগের দিন বুড়ি নাতবৌ কে ফিসফিস করে জানিয়েছিল তার বড় কমলালেবু খেতে ইচ্ছে করছে। কি জানি, পরের বার শীতে থাকে কি না থাকে! বৌ তার এটুকু সাধ মেটাতে পারবে না? তা বৌ গাল দেয়নি শুনে। বৌটা খারাপ নয়। মনে দয়ামায়া আছে এখনো। বুড়ির দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে সে বললে, "কমলা? তার তো এখন অনেক দাম ঠাগমা!! দুটি পয়সা জোগাড় করতে পারলে সবাই একথাল জাউ খেয়ে হলেও পেরাণটা রক্ষে হত যে!!"

বিছানায় পড়ে থাকা বুড়িকে পাশ ফেরায় বৌ। তার শোবার জায়গা পরিষ্কার করে। ঘরে ঘুঁটে জ্বালিয়ে ঘর গরম করে। এর বেশি তার আর করার ক্ষমতা নেই। 

বুড়ি ফোঁপায়। ঘুমের মধ্যে তার চোখের কোণ বেয়ে জল নামে। বৌয়ের মায়া হয় খুব। মুকুলকে বলে কমলালেবুর কথা। মাথা নিচু করে ভাবে মুকুল। সত্যিই বড় অসহায় সে। তার কাজটা ক'দিন হল আর নেই। জল গড়িয়ে খাবার মতো সংস্থানও নেই তার। তবুও ভাবে সকালে স্টেশনে যাবে। যদি কোনো মাল টানার কাজ পায়। যদিও সেখানেও কাজ পাওয়া নিয়ে মারামারি, হাতাহাতি হয়। তবু কিছু যদি জোগাড় হয়। একটা অন্তত কমলালেবু কিনে আনবে সে।

সকাল হয়। মুকুল বেরিয়ে যায় স্টেশনের দিকে। পাতাপুতি জ্বালিয়ে উঠোনে কাঠের জ্বালে কৌটো খালি করে একটু চা বানায় বৌ। সঙ্গে মেশায় ঠাকুরের কৌটোর বাতাসা। মনে ভাবে বুড়ির একটু চা পেলে ভালো লাগবে। শুকনো কলাপাতার দেয়াল তোলা বুড়ির থাকার জায়গাটুকু। বড় ঠান্ডা আজ। বৌ আঁচলের মধ্যে দুটি মুড়ি আর চা টুকু নিয়ে ডাক দেয় বুড়িকে। ঘরের থেকেও ঠান্ডা বুড়ির গা। কখন কমলালেবুর সাধ নিয়ে বুড়ি ফাঁকি দিয়েছে যে!

সন্ধের মধ্যে বুড়ির দাহকার্য হয়ে গেছে। পাড়ার ছেলেরা সব কাঁধ দিয়েছিল এসে। এত বয়স হয়েছিল বুড়ির, তার মৃত্যুতে শোক নেই তাই। ছেলেরা বুড়ির মৃতদেহ চালিতে তুলতে গেলে ঠুং করে আওয়াজ করে বুড়ির বালিশ নীচে পড়ে। আওয়াজ কেন? ভাই, বালিশ থেকে আওয়াজ আসে কেন!! 

ছেঁড়া বালিশের মধ্যে থেকে বেরোয় হলুদ কড়কড়ে হয়ে যাওয়া নোট, বেশ কয়েকটা কালো হয়ে আসা মুদ্রা। সব মিলে পাঁচ ছ' হাজার টাকা তো হবেই। তাইই বুড়ি বালিশ ছাড়া হতনা কখনো! হাগা মোতাটা পর্যন্ত বিছানায় করত। কিছুতেই ওঠানো যেতনা বিছানা থেকে।

স্তব্ধ বৌয়ের হাতে বালিশ ধরিয়ে দিয়ে শবযাত্রী দল রওনা হয়ে গেছে কখন। বৌ বালিশ নিয়ে ঘরে ঢোকে। মুকুলের থলে হাতড়ে একটা কমলালেবু বের করে। ঠাকুমার জন্য মুকুল নিয়ে এসেছিল ওটা।

হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে বৌ। সত্যি সত্যিই মরে আপাতত বাঁচিয়ে গেল ঠাকুমা, মুকুলের পুরো পরিবারকে। 

সান্তাক্লজ যে কত রকম রূপ ধারণ ক‍রে আসে পৃথিবীতে!!

8 comments:

Unknown said...

ভাল লেখা। শব্দ কম কিন্ত ওজন আছে

Mita ghosh said...

থ‍্যাঙ্কিউ অরুনেন্দু বাবু। বুঝতে পারছি এ আপনার কমেন্ট। অনেক অনেক ধন্যবাদ। উৎসাহ পেলাম... @Arunendu roy...

pradipwritenow said...

bhari sundor lekha sonar doyat kolom theke.

Mita ghosh said...

থ‍্যাঙ্কিউ ভাইটি। খুব খুশি হলাম...😊

a lust for life said...

ভারি সংবেদনশীল লেখা। ❤️

ANKUR ROY said...

অসাধারণ গল্প। শব্দের ফাঁকে ফাঁকে কত কিছু যে বলা হয়ে গেল...

Mita ghosh said...

অনেক ধন্যবাদ...🌷🙏

Mita ghosh said...

ভালোবাসা ভাই। খুব খুশি...☺️🌷