সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
নন্দা
রঞ্জনা বসু
ছেলেবেলায় মা মরেছে নন্দার। বাপ আজন্ম হাঁপানি রোগী। বেশিরভাগ সময় শুয়ে থাকে বিছানায়। নইলে শুখা মাঠে বসে বসে হাঁপায়। নন্দাই খাটে, রাঁধে। ভিক্ষা করে। টেনে নিয়ে যায় সংসার। আগলে রাখবার তো কেউ নেই। পেটের ধান্দায় ঘোরে ঘাটে,আঘাটে।
সুযোগ পেলেই কানা গৌরাঙ্গ ওকে বলে, তুই আমার বউ হবি?
নন্দা সে কথার জবাব দেয় না। তার বদলে হাত পেতে বলে, গোটা কুড়ি টাকা দিবি? আজ হাঁড়ি চড়েনি।
নন্দার হাত খানা হাতে তুলে নিয়ে অনেক্ষণ ধরে নাড়াচাড়া করে, সুখের পরশ নেয়। এক সময় বলে, টাকা নাই রে---
ততক্ষণে ঝট করে হাতটা ছিনিয়ে নিয়েছে নন্দা।
তবে এতক্ষণ ধরে ছিলি কেন?
নন্দা তার অনাড়ম্বর জীবনের একপ্রান্তে এসে পুরোনো দিনের কথা ভেবে উত্তেজনায় ঘেমে ওঠে।সেই বছর শীত শেষ হয়ে বসন্ত এসে গেলে আকাশের চেহারা পাল্টাতে আরম্ভ করেছে। গাছগুলো ফুল আর নতুন পাতায় সেজে উঠেছে। বাপের চোখে তখন ঝাপসা ভাব ধরেছে। এক দুপুরে গরুর গাড়ি থেকে নেমে জনা চারেক লোক এসে বসলে দুয়ারে। ঋণের টাকা শোধ দিতে পারে না বলে, সহজ চুক্তি করে ফেলে বাপ। অষ্টাদশী নন্দা তারপর সব ফেলে বউ হয়ে চলে আসে নতুন সংসারে। সেখানে বুড়ো বাপের জায়গায় বুড়ি শাশুড়ি আর বয়স্ক সোয়ামী। এখানে এসে সে ভাতের গন্ধ পায়।
ভিজে চুল রোদ্দুরে শুকায়। নদীর ঘাটে পা ডুবিয়ে ঢলে পড়া সূর্যকে দেখে। নন্দা আগে দেখেনি কখনও। বুকের ভেতর জমা করে একরাশ ভরসা, একমুঠো আশা, আকাঙ্খা। খাঁ খাঁ রোদ্দুরে বসে ভাবে জোৎস্না রাতের কথা। নদীর গুনগুনানি শুনে মঙ্গল ঘট পাতে। ভেজা কাপড় মেলে দিয়ে আগুনের আঁচে বসে ভাত রাঁধে। হঠাৎই উথাল পাথাল ঢেউ ভিজিয়ে দেয় চোখ। গৃহস্থ খেলা শেষ হয়। ছিটে বেড়ার ঘরটা কালো অন্ধকারে ভেঙে পড়ে। ছেলেপুলের সাধ মেটাতে সোয়ামী আবার নতুন মুখ আনে ঘরে। নন্দার স্মৃতি ঘেরা পরমায়ুর মাঝে থেকে যায় মস্ত বড়ো শূন্যতা। একলা চলা জীবন বন্যা খরা আগুন দেখে দেখে ছুটে যায় নদীটার কাছে। এখন বৃদ্ধ বাপের মতো তার চোখেও ঝাপসা ভাব আসে। নন্দার ঝাপসা চোখের করুন আর্তি বাতাস বাহিত হয়ে নদী পেরিয়ে মাঠ, মাঠ পেরিয়ে দিগন্তে ভেসে যায়। একদিন বাপটাও মরে যায়। এখন আছে শুধু বাপের ছিটে বেড়ার ঘরটা। বৃষ্টিতে জল পড়ে, চাঁদ উঠলে আলো আসে। আসতে চায় গৌরাঙ্গ। অবৈধ সম্পর্ক নন্দা চায়না। কারণ গৌরাঙ্গের বৌ, ছেলে নিয়ে একটা সংসার আছে।
0 comments:
Post a Comment