সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 


বিবেকানন্দ ও সমসাময়িক ধর্মিয় প্রেক্ষাপট 

অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী 

আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি কিভাবে সঙ্ঘ পরিবার ও এখনকার বিজেপি সরকার বিবেকানন্দ কে হিন্দু ধর্মের মসিহা  বানানোর চেষ্টা করছে, কারন তার নাম ভাঙিয়ে অনেক মানুষের কাছে খুব দ্রুত পোঁছান যায়। খুব দুঃখ জনক যে আমরা বাঙালি পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্র কে ধরতে পারছি না যদিও জানি স্বামীজীর আদর্শ  শুধু মানুষ থাকবে যেখানে তিনি মুসলমানের শরীর -এর কথা উল্লেখ করে তাদের রাজসিকতার কথা উল্লেখ করেছেন। সাথে থাকবে বৈদান্তিক শরীর।   অর্থাৎ সমন্বয়- যার কথা স্বামীজী বারবার উল্লেখ করেছেন । কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা শুধু একে অপরের থেকে আলাদা করার জন্য - লড়িয়ে দাও । 

 শ্রীরামকৃষ্ণ ইসলাম মতেও সাধনা করেন, তাই এই হিন্দু বলা জঙ্গি মাতব্বররা শ্রীরামকৃষ্ণের কথা হিন্দু মসিহা হিসাবে উল্লেখ করতে ভয় পায়। তিনিই তো স্বামীজির মনে ঢুকিয়ে গিয়েছিলন এই সমন্বয়ের কথা তার বিখ্যাত সেই উক্তিতে যা জগতের সমস্ত ধর্মিয় গোঁড়ামিকে এক মুহুর্তে বলতেই পারা যায়- বাপি বাড়ি যা- যত মত তত পথ।   যেহেতু স্বামীজী অনেক  সময়-ই হিন্দুর কথা বলেছেন, তাই তার কথার সামান্য অংশ কে আলাদা করে লেজা মুড়ো নিজেদের মতো বসিয়ে স্বামীজীকে  এরা অপমান করেই চলেছেন, কিন্তু আমরা তার প্রতিবাদ করিনি, বা করছি না। দশ চক্রে ভগবান ভুত হবার আগে এইটা এই মুহুর্তেই পরিস্কার হওয়া দরকার স্বামীজী কোন ভাবেই নিজেকে কুচক্রিদের কথা অনুযায়ী হিন্দু জাতিয়াতাবাদে নিজেকে বন্দি রাখেননি । 

তিনি বলেছেন- ধর্ম যাহা কিছু বলে, সবই যুক্তির কষ্টিপাথরে ফেলিয়া পরীক্ষা করা আবশ্যক৷ কেহই বলিতে পারে না, সকল ধর্মই কেন এই দাবি করিয়া থাকে যে, তাহারা যুক্তি দ্বারা পরীক্ষিত হইতে বাধ্য নয়৷…যুক্তির মানদণ্ড ব্যতীত ধর্মবিষয়েও কোনরূপ বিচার বা সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়৷ 

এই কথা বলার পর কারুর যদি মনে হয় স্বামীজী কোন এক নির্দিষ্ট ধর্মকে নিয়ে অদিখ্যেতা দেখাচ্ছেন, তাহলে তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যেতে পারে। তার বিজ্ঞান মানসিকতার প্রমান পাই যখন তিনি তার গুরুকেও পরিক্ষা করে নেন যে সে জাল কিনা , আর তিনি আবার নিজের বিচার বুদ্ধিকে সরিয়ে রাখবেন ! 

তিনি এও বলেছেন ,(আমার মতে সঙ্ঘ পরিবারের শোনা উচিৎ)- আমি অবশ্য বেদের ততখানিই গ্রহণ করি, যতখানি যুক্তির সাথে মেলে৷

অর্থাৎ যুক্তি-গ্রাহ্যতা কে শিরোধার্য করে এইটাই বোঝাতে চেয়েছেন প্রাচীন বলেই সেটা গ্রহন করতে হবে এমন নয় যদিনা তার মধ্যে যুক্তি থাকে । এর সাথে তিনি মারাত্মক কিছু মন্তব্য করেছেন- 

…প্রাচীন শাস্ত্রে বর্ণিত এই সকল ঈশ্বরের দূত বা মহাপুরুষের কাহিনীকে যখন যুক্তিসম্মত বলিয়া প্রমাণ করিতে পারিব, তখন আমরা তাঁহাদিগকে বিশ্বাস করিব। 
অর্থাৎ যুক্তির শিরদাঁড়ার ওপরেই সব গঠিত, সেখানে আদেখালেপনা, বা ঠুনকো জাতীয়তা বাদের কোন সম্পর্ক নেই। 
সকল ধর্মের ও সকল দেশের দুর্বল অপরিণত মস্তিস্ক ব্যক্তিগণ একটিমাত্র উপায়েই তাহাদের নিজ আদর্শ ভালবাসতে পারে৷ সে উপায়টি–অপর সমূদয় আদর্শকে ঘৃণা করা৷

আজকের সময়ে দারিয়ে যদি বিচার করা হয় তবে দেখতে পাব , কিছু কথা যা তিনি বলে গেছেন তা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শাশ্বত উজ্জ্বল। 

গোঁড়াদের গোঁড়ামির কারণ এই যে, তাহারা এই গোঁড়ামি করিয়া নিজেরা কিছু লাভের প্রত্যাশা করে৷। 
কাদের কি লাভ তা কিন্তু বলে দিতে হবে না, কারন আমরা সকলেই তা জানি, আর যাদের জানার কথা তারা এই কথাগুলো নিশ্চিত ভাবেই বিবেকানন্দ রচনা থেকে বাদ রাখতে চাইবেন। 

রাম-মন্দির নির্মান এর পর  হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাজমহল না কি হিন্দুদের মন্দির। এই প্রসঙ্গে  বিবেকানন্দের প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতা লিখেছেন, ‘‘মোগলগণের গরিমা স্বামীজি শতমুখে বর্ণনা করিতেন৷… আগ্রার সন্নিকটে সেকেন্দ্রার সেই গম্বুজবিহীন অনাচ্ছাদিত সমাধির পাশে বসিয়া আকবরের কথা বলিতে বলিতে স্বামীজির কণ্ঠ যেন অশ্রু গদগদ হইয়া আসিত৷’’ নিবেদিতা আরও লিখেছেন, এক শিষ্য শাহজাহান মুসলমান বলে তাকে বিদেশি বলায় বিবেকানন্দ তাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন৷ উদার মনের বিবেকানন্দ এমনকী একথাও বলেছেন– ‘‘এটা খুবই স্বাভাবিক যে একই সময়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এবং নির্বিরোধে আমার ছেলে বৌদ্ধ, আমার স্ত্রী খ্রীস্টান ও আমি নিজে মুসলমান হতে পারি’’৷
অর্থাৎ শিল্পের ভালবাসায় তিনি যে ধর্মের মোড়কে নিজে ঢেকে রাখেননি তা আমরা  জানতে পারলাম, সাথে তার সুতীব্র জাতীয়তাবাদী চিন্তার পরিচয় পেলাম। আসলে সকলকে মিলেমিশে - মিলে সুর মেরা তুমহারা - হতে পারে এটা আজকের হিন্দু সন্ত্রাসবাদীরা কিছুতেই বুঝতে পারেনা, তাই মুসলমান মৌলবাদিদের সাথে তাদের এখানে ভয়ানক মিল। আর সেই পর্যায়ে যদি দেশকে তারা নিয়ে যেতে পারে তবে আমাদের দেশও কবে আফগানিস্থান  হয়ে যাবে, শুধু ধর্মটাই পাল্টে যাবে। 

কয়েকদিন আগে থেকেই আমরা জেনেছি  কিভাবে যোগী সরকার লাভ-জেহাদের দোহাই দিয়ে মানুষের স্বাধীনতা কাড়তে চাইছে। মানুষের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ মানুষ কোন ধর্ম পালন করবে তার স্বাধীনতাকে । এক সময়ে মানুষ হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে গেছিল বা জোর করে ধর্মান্তরন করছিল বলে অভিযোগ । স্বামীজী কিন্তু বলে দিলেন -  দারিদ্র ও অবহেলার জন্যই আমাদের এক–পঞ্চমাংশ লোক মুসলমান হইয়া গিয়াছে৷ কেবল তরবারির বলে ইহা সাধিত হয় নাই৷ …এজন্য অপর কাহাকেও দোষ দিও না, দোষ দাও নিজের ধর্মকে৷

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন সরকারের কাছ থেকে আমরা খাবার, বাসস্থান চাই, সরকার আমাদের ধর্ম দেখিয়ে বোঝানর চেষ্টা করে তারা কোটি কোটি টাকার রাম-মন্দির গড়ে মানুষের কত উপকার করছেন, আমি বলছি সেই সরকারের স্বামীজির এই কথা শোনা উচিৎ যে তাদের জন্য তিনি কি কথা রেখে গেছেন। লজ্জা যদি থাকে তবে যেন তারা দ্বিতীয় দিন স্বামী বিবেকানন্দের কথা মুখে না আনেন । স্বামীজী বলে গেছেন- ক্রোর টাকা খরচ করে কাশী–বৃন্দাবনের ঠাকুরঘরের দরজা খুলছে আর পড়ছে৷ আর এই ঠাকুর কাপড় ছাড়ছেন, তো এই ঠাকুর ভাত খাচ্ছেন, তো এই ঠাকুর আঁটকুড়ির ব্যাটাদের গুষ্টির পিণ্ডি করছেন এদিকে জ্যান্ত ঠাকুর অন্ন বিনা, বিদ্যা বিনা মরে যাচ্ছে’৷


শেষ কথাটাই হল শেষ কথা যা আমাদের সরকারের জন্য প্রযোজ্য কারন তারা সর্বদা নিজেদেরকে মানুষের ভগবান মনে করে । এই কথা শোনার পর নিশ্চিত ভাবেই নিজেদের কে ভগবান ভাবার আগে দু বার ভাববে । স্বামীজী বলছেন - যে ভগবান আমাকে অন্ন দিতে পারেন না, তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত সুখে রাখবেন –ইহা আমি বিশ্বাস করি না। 

0 comments: