সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 ভুখা পেট 

 মিত্রা হাজরা 


জার্মান এর বাপ তাকে এক ঘা দিল, ভিগা জাড়ে মাঠে ঘুরতে গেলি কেনে? এই কাঁকুরে মাটিতে শালপাতা  কুড়িয়ে মেটে আলুপোড়া খেয়ে দিন কাটে। তাই সে মাঠে গিয়েছিল--দেখ্ বাপ, কি আনছি! কিছু ধান, তুই ধান চুরি করলি? আবার দেখাতে এলি? শরম নাই তুর? চুরি করি লাই। তবে কে তোরে ধান দিল? চুহার গর্ত থেকে পাইছি। গর্তের মুখে ইঁদুর উঁকি দেয়, শরীরে রোমের বাহার, কালো পুতির মত চোখে জার্মান কে দেখে। খিদেয় পেট জ্বলে, গাঁয়ে কাজ নাই। জঙ্গলে কচু, ঝিঙে, নেনুয়া, জঙলী বরবটি শেষ। খাবে কি? আজ চুহার বিলে হাত ঢুকিয়েছিল। ধান পেয়েছে, অনেকগুলো বিলে সে হাত ঢুকিয়ে ধান বার করেছে। 


মঙলু খুশি হলো--- এক কাজ কর বাপ, সিঝাতে বসা তবে, কাটকুটো জ্বেলে মাটির হাঁড়িতে সেদ্ধ বসায় সে। মঙলু বের করে দুটো কচু, ওটাও ফেলে দে--সিঝাক্। কচু কই পেলি বাপ?  হুই হোথাকে জঙ্গলে। শালপাতায় ঢেলে একটা একটা  করে সেই ধান ছাড়ায় বাপবেটায়। কিছু ধানের খোলা লেগে র ইল, তর হয়--- না, তাই হাপুস হুপুস করে খেল দুজনে। টুকুন লুন হলে ভালো হতোক---নারে বাপ্ ! হাসে মঙলু ,ঐ যাই জুটছে খা---- তায় লুন!বাপ বাকি গুলান পাছড়ায়ে দিবু সাঁঝের কালে, দেখ পাথর, ঐ দিয়া কুটবু। আর সাঁঝ লয়---কাল খাবু। এমন কইরা আর কতকাল চলবেক কে জানে! 

পরদিন সকাল সকাল জার্মান গেছে চুহার বিল থেকে ধান আনতে। দেখে কুসমী --কেওট বস্তীর মেয়ে। রোগা দুবলা শরীল, কিন্তুক চিকন। তাকে দেখে ভুখা জার্মান এর মন মোচড় দেয়। লকড়ী বোঝা নিয়ে মাঠে গিয়ে দেখে ইঁদুরের গর্ত খোঁচাচ্ছে। এই তু কি করছিস? তুর তাতে কি কাম। খাটো শাড়িটার মধ্যে জোয়ানীর উছাল, চুইয়ে পড়ছে ঘামতেল। জার্মান হাঁ করে চেয়ে থাকে। দেখে কুসমী অবলীলায় একটা ইঁদুর ধরে আনে। কি হবে এতে! পুড়িয়ে খাবো, কাঠ চাঁপা ফুলের মত রোদ্দুর টা, ইঁদুরটাকে হাতে নিয়ে কুসমীর চোখ দুটো রূপোর পাতের মত ঝকঝক করে ওঠে। মাথায় কাঠের বাড়ি মেরে ইদুরটাকে মেরে কাঠকুটো জ্বেলে পোড়াতে দিল। যুবতীর চোখ যেন চড়ুই পাখির মত নাচছিল, অবাক হয়ে দেখতেই থাকে জার্মান। তাকেও ছাড়িয়ে শালপাতায় করে দেয় একটু কুসমী। ঘরে বাপের শুকনো মুখটা মনে পড়ে। একটুকুন লুন হইলে বেশ হতো! হাঁ তো---টুকুন লুন ও দেয়, খেয়ে কুসমী নিজের পথ ধরে। জার্মান ওখানেই শুয়ে পড়ে গাছতলায়। ---কারা যেন চারপাশে, কে গো তুমরা, আমরা বরমদেওর জীব। আমাকে পোড়ালে, কি দোষ আমার? নিদ্ খুলে গেল, কে এলো তবে, তাকিয়ে দেখে-তখনো চুহার হাড়গোড় পড়ে আছে। অন্য ইঁদুরগুলো সেগুলো টেনে গর্তে নিয়ে যাচ্ছে। চুহা, চিড়িয়া, গাছপালা---সব ই তো ধরতী আবার। এটা কি করলো সে, চুহা খেল!  দুহাত দিয়ে পৃথিবীটাকে ছুঁতে ইচ্ছে করছে জার্মানের। বড় গলতী হয়ে গেল। তোরা থাক সব নিজের বিলে। ঐ কুসমীটাকে আইসতে দে, লাঠিঠ দিয়ে পিটাইব। কি বইলল, --প্যাট খান ভরানোর লেইগগে চুহা খাই--খাওয়াচ্ছি চুহা! জোছনা নামছে দুধসাদা, মাঠ ছেয়ে গেছে---সে দৌড়াতে লাগলো মাঠময়---খা জোছনা খা---বড় সোন্দর! খা! খা !বাপটা ঠিকই  কয়! লোভ করিস লাই, না পাস, ভুখা পেটে থাকবি। ইঁদুর গুলো কিচমিচ করে---বড় অলাজজ্ কাজ হইয়ে গেছে। জোনাকি উড়ছে মাঠময়---খা, খা জোছনা খা, দৌড়াচ্ছে জার্মান।

0 comments: