সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 শিশুগাছ ও হেমন্ত

 রানা সেনগুপ্ত
 
 হিমু হিমু হিমু হিমু.‌.‌.‌
 গভীর রাতে চমকে ঘুম ভেঙে উঠে বসেছিল হেমন্ত।  বিস্মৃতপ্রায় ডাকনামে তাকে কে এমন আকুল স্বরে ডেকে চলেছে?‌ শোবার ঘর ছেড়ে অন্য ঘরটাতে আসতেই  লক্ষ করলো, ডাকের জোর কেমন যেন বেড়ে গিয়েছে। আর অনেকটা বাঁশির সুরে ডাকটা আছড়ে পড়ছে তার মাথার ভেতর।
নতুন আবাসনে ঠাঁই পেতে দম বেরিয়ে গিয়েছিল। নানা মহলে তদ্বিরের শেষে যে ফ্ল্যাটটা পাওয়া গেল, সেটাতে ঢুকে বন্ধ জানলাগুলো খুলতেই উত্তর থেকে একটা দমকা হাওয়া ঢুকে পড়লো ভেতরে। তারপরই হেমন্তের চোখে পড়লো, জানলার ঠিক বাইরে  বিশাল শিশু গাছ। হাওয়ায় তার ডালপালা দুলছে।
 সারাদিন কেটে গিয়েছিল ফ্ল্যাটের সাজসজ্জায়। ক্লান্ত শরীরে সে আর মঞ্জরী সকাল সকাল খাওয়া সেরে শুয়ে পড়তে না পড়তেই গভীর ঘুম। তবু মাঝরাতে, মাথার ভেতর সেই আকুল করা পুরনো ডাকনাম শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল হেমন্তের। জানলা খুলতেই তার মাথায় সে অজানা স্বর বলল, ‘‌ আমি এখানে হিমু। তোমার ঠিক জানলার বাইরে। আমার ছড়ানো ডালপালা তোমার জানলা ছুঁয়ে গিয়েছে। মাঝেমাঝে জানলার কাছে এসো। কথা বলতে পারলে খুব ভাল লাগবে।’‌
 হেমন্ত অবাক হয়ে তাকিয়েছিল বিশাল শিশুগাছটার দিকে। তাকে একটা গাছ ডাকছে!‌ একটা গাছ তার সঙ্গে মাঝরাতে কথা বলছে?‌ মাথার ভেতর কোনও জবাব এলো না। স্বরটা নিরব হয়েছে।
 হেমন্ত বিশাল গাছটাকে খুঁটিয়ে দেখলো। প্রথমে গাছটা কোন অজ্ঞাত কারণে হেলে পড়েছিল। মোটাসোটা গুঁড়িটা বেঁকে প্রায় মাটিতে শুয়েই পড়েছিল । তারপর অসীম প্রাণশক্তিতে যেন মাটি ছুঁইছুঁই  অংশ থেকে ফের নতুন করে খাড়া এগিয়েছে আকাশের দিকে। গাছটা যেন আকাশের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জের সুরে বলছে, পারলো না। আমাকে শুইয়ে দিতে পারলো না ঝড়। আমি আবার বেড়েছি। তোমাকে ছুঁয়ে ফেলতে এগিয়ে চলেছি।
                                       ২
পরের তিনদিন আর কিছু নেই। হেমন্তে জানলার কাছে দাঁড়িয়েও কিছুই শুনতে পায়নি। শুধু গাছটাকে দেখেছে। যথারীতি অফিস করেছে। আর মঞ্জরী নতুন পাড়ায় এসে লোকজনের সঙ্গে আলাপ জামিয়েছে। তিনদিন পরের রাতে খেতে বসে সে–ই কথাটা তুলেছিল। বলেছিল, ‘‌ জানো?‌ আমাদের জানলার বাইরে যে শিশু গাছটা রয়েছে, সেটা না কেমন যেন অদ্ভুৎ। সবাই বলছিল, গাছটার চারপাশে যে ব্লকগুলো রয়েছে, তার উপরের দিকের ফ্ল্যাটগুলোর জানলা দিয়ে সেটার ডালপালা নাকি উঁকি মারে। কাকে যেন খোঁজে গাছটা। ওটার গায়ে কেউ পেরেকটেরেক পুঁততে গেলে গাছটা কেমন যেন ডালপালা নাড়িয়ে প্রতিবাদ করে। ভূতে পাওয়া গাছ নাকি?‌’‌
 হেমন্ত হেসে উঠেছিল, ‘‌ নাও, তুমি গিয়ে আবার একটা ভূতের গল্প শুনে এলে তাহলে!‌ আশা করি তোমার মত শিক্ষিত মেয়ে এসব গালগল্পে বিশ্বাস করেনি। আসলে এই সরকারি আবাসনে যারা  মাথা খুঁড়েও ফ্ল্যাট পায়নি, তাদের আত্মীয়বন্ধুরাই ভূতের গল্প ছড়ায়। যাতে ভয় পেয়ে তুমি এখানে বেশিদিন না থাকো। মনে নেই?‌ আমাদের আগের ভাড়াবাড়ির সামনের বাড়িতে কন্ধকাটার উপদ্রবের কথা সবাই বলতো। কোনদিন দেখেছো?‌  রাতবিরেতে ওই বাড়ির সামনে দিয়ে কতবার গিয়েছি। কিছু তো দেখিনি। আসলে গল্পটা শুরু হলো আমাদের ওই বাড়ি থেকে উঠে যাবার নোটিশ যেদিন বাড়িয়ালা দিল, আমরা বললাম, এ্রগ্রিমেন্টে এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ছাড়বার কথা নেই, ভাড়া বাড়াবার কথা নেই, তারপর থেকেই। এখানেও তাই হচ্ছে।’‌মঞ্জরী চুপ করে যাবার আগে একবার জানলার বাইরের শিশু গাছটার দিকে  খুব সন্দেহের চোখে তাকিয়েছিল।
 হিমু ডাকনামটা প্রায় পনের বছর আগে পিছনে ফেলে এসেছে হেমন্ত।  হাওড়ার সাঁকরাইলে মামাবাড়িতে থাকার সময় সে বাড়ির সকলে তাকে হিমু নামে ডাকতো। সে বাড়ি থেকে একবস্ত্রে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল তাকে। ছোটমামির পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করতে রাজি না হয়ে। হেমন্ত তখনও চাকরি পায়নি। কয়েকটা টিউশনিই ছিল রোজগার।  অর্ধেক রাজত্ব সঙ্গে স্থূলাঙ্গী রাজকন্যায়  আপত্তি জানতে তবু দু’‌বার ভাবেনি। সেই নিয়ে জোর অশান্তি। হেমন্ত সরাসরি মেসে এসে উঠেছিল। দরজায় দরজায় ঘুরে জোগাড় করেছিল সরকারি চাকরিটা।  এখন তার বন্ধুরা তাকে হেমা বলে ডাকে। আর বন্ধুর সংখ্যাও হাতেগুনতি।  পুরনো নাম ধরে গাছটা তাকে বাঁশির সুরে ডাকছে! অবিশ্বাস্য।‌
                                          ৩
গভীর রাতে আবার সেই ডাক— হিমু হিমু হিমু হিমু। সে জানলা খুলে দাঁড়াতেই গাছটা বলল, ‘‌ আমার গুঁড়িতে কাল কারা এসে অনেকগুলো বিজ্ঞাপনের টিন পেরেক দিয়ে ঠুকে ঠুকে লাগিয়েছে। আমার খুব যন্ত্রনা হচ্ছে। পেরেকগুলো খুলে দেবে হিমু?‌’‌
 সে আর চুপ করে থাকেনি। বলেছিল, ‘‌ তুমি নাকি শরীরে পেরেক ঠুকতে এলে ডালপালা নেড়ে বাধা দাও। এবার পারলে না কেন?‌’‌
 গাছটা বলল, ‘‌ আগে পারতাম। অনেক বছর আগে আমাকে কাটতে এসেছিল একদল লোক। একটা মোটা ডালকে নিজেই ভেঙে ওদের মাথায় ফেলেছিলাম। ভয় পেয়ে লোকগুলো পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বারবার তো তা করতে পারি না। সে ক্ষমতাও আমাদের মত গাছেদের নেই। তাই দিনের পর দিন এমন করে অত্যাচার সইতে সইতে প্রাণশক্তি কমে আসছে হিমু। তুমি এসেছো। আমি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। পেরেকগুলো খুলে নাও। আমার বড্ড লাগছে।’‌
 মঞ্জরীর ঘুম খুব গভীর। সে জানতে পারেনি, হিমু সেই রাতের গভীরে কোন এক তাড়নায় টর্চ হাতে দরজা খুলে বেরিয়ে সাঁড়াশি দিয়ে টেনে টেনে গাছের গুঁড়ি থেকে  বাইশটা পেরেক উপড়েছিল। আর প্রতিবারই তার মাথায় ভেতর বেহালার সুরে  বেজে উঠেছিল করুণ অথচ চাপা আর্তনাদ। তীব্র যন্ত্রনা সহ্য করছে যেন গাছটা!‌ সব শেষে সে যখন ফিরছে, তখনই গাছটা বলেছিল,‘‌ তুমি গাছেদের বড় ভালোবাসো হিমু। আমরা বড় অসহায়। আমার গুঁড়িতে কান পাতো। শুনতে পাবে সুদূর টাঙ্গানিকায় একটা বিশাল গাছ কাটা পড়তে পড়তে কেমন আর্তনাদ করছে। পারলে কিছু করো।’‌
 কৌতুহলী হয়ে গাছটার গুঁড়িতে কান পাতাতে না পাততেই চমকে উঠেছিল সে। ইলেকট্রিক করাত হাতে একদল লোকের গাছ কাটবার সময় গাছটার প্রাণপণ আর্তনাদ বেশিক্ষণ শুনতে পারেনি। ঝটিতে কান সরিয়ে নিয়েছিল। গাছটা ফের বলেছিল,‘‌ কিছু করো হিমু। কিছু করো। আমাদের ধ্বংস করে মানুষ না বুঝেই নিজেদের কী ভীষণ সর্বনাশ করে চলেছে।এই ধ্বংসলীলা ঠেকাও।’‌
 ফিরে আসতে আসতে বিড়বিড় করে হেমন্ত বলেছিল, ‘‌ আমি— আ–আমি কী করবো। ক্ষমতাই বা কতটুকু।’‌ তারপর ঘোর সন্দেহে ভেতরটা দুলে উঠেছিল। এসব কি ঘটছে?‌ সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে!‌ রাতবিরেতে গাছের ডাকে ঘর ছেড়ে  তারই গুঁড়িতে পোঁতা পেরেক তুলছে সাঁড়াশি দিয়ে!‌ গুঁড়িতে কান পেতে টাঙ্গানিকায় কাটা পড়া গাছের প্রচণ্ড আর্তনাদ শুনছে!‌
                                     
 শহরের নামী সাইক্রিয়াটিস্ট অলোক চৌধুরী ছেলেবেলার বন্ধু। তার কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলে হেমন্ত জানতে চেয়েছিল, ‘‌ তোর কি মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাচ্ছি?‌ গাছটার কথা না হলে শুনতে পাচ্ছি কি করে?‌’‌
 তাকে  অনেকক্ষণ নানারকমের পরীক্ষার পর  অলোক বলল, ‘‌ আমার মনে হয় না, তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস। আসলে তুই গাছ, পাখিদের ভালোবাসিস। তোর মনে নেই, স্কুলের কাছে একবার তালগাছে  বাবুইয়ের বাসা থেকে একটা ছানা খসে পড়েছিল?‌ সেটাকে বাসায় ফেরাতে তুই তালগাছ বেয়ে হাঁটু, কনুই আর পেটের ছালচামড়া তুলে রক্তাক্ত হয়েছিলিস? ক্লাসের ফার্স্ট বয় অভিজিত একবার একটা দাপোটির চারাকে পিষে ফেলেছিল। তুই মেরে ওর মুখ ফাটিয়ে দিয়েছিলিস? তোর লেখাপড়াই বন্ধ হতে বসেছিল যে ঘটনায়!‌ ‌এই ভালবাসাটা থেকেই তোর মনে হচ্ছে গাছটার কথা শুনতে পাচ্ছিস। ঘুমের ওষুধ দিলাম। রাতে শোবার আগে খেয়ে ভালো করে ঘুমো। দেখবি সব সমস্যা কেটে যাবে।’‌
 বন্ধুর দেওয়া ঘুমের ওষুধ হেমন্তকে গভীর ঘুমের রাজ্যে পৌঁছে দিল। সে আর গাছটার কণ্ঠস্বর শুনতে পায়নি। এমনি করে টানা মাস তিনেক কেটে যেতে হেমন্ত হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।  পাগল হয়ে যাচ্ছে, সে সন্দেহটাও কেটে যাচ্ছিল ক্রমে।
                                                             ৪
 তারপর এক রাতে  আমফান ন উমফুন নামের ভয়ংকর ঝড়টা এলো। ধীরে ধীরে হাওয়ার বেগ বাড়তে শুরু করলো। কি গর্জন আর হু হু ডাক!‌ যেন সমুদ্র উত্তাল থেকে উত্তালতর হয়ে উঠছে!‌ বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল । আবহাওয়া দফতরের ঘোষণায় বারবার বলা হচ্ছিল, ঝড়ের তীব্রতা ক্রমেই বাড়বে। তাই কেউ যেন বাড়ির নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে পথে না বের হয়। রাতে মঞ্জরী মুগের ডালের খিচুড়ি আর ডিমভাজা  বেড়ে দিতে খু্শিই হলো হেমন্ত। তার প্রিয় খাদ্যতালিকায় খিচুড়ি প্রথমের দিকেই রয়েছে।  আমফানের চোটে তাপমাত্রাও যথেষ্ট নেমে যাওয়ায় ফ্যান না চললেও ঘুমের অসুবিধা হয়নি। তাই রাত আর একটু বাড়তেই আরামে ঘুমিয়ে পড়েছিল হেমন্ত আর মঞ্জরী। ঘুমের ওষুধের সেদিন আর দরকার ছিল না তার।
 গভীর রাতে একটানা আর্তনাদ তাকে জাগিয়ে দিল। চমকে উঠে বসে হেমন্ত শুনলো, গাছটা খুব কষ্ট করে যেন তাকে আবার ডাকছে— হিমু হিমু হিমু.‌.‌.‌
  সব ভুলে হেমন্ত জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মাথার ভেতর শুনতে পেল—‘‌ আর পারছি না হিমু। আমাকে মাটিতে শুইয়ে দিতে আসছে ঝড়। হাওয়ার ঝাপটার পর ঝাপটা আমাকে নড়িয়ে কাঁপিয়ে চলেছে। ঝড়ের তাণ্ডব ঠেকাতে পারবো না। গোড়া থেকে উপড়ে বা ভেঙে যেতে হবে। কিন্তু এই বিশাল শরীর আমি ফেলবো কোথায়?‌ তোমাদের আর তোমাদের পাশের ব্লক দুটো গুড়িয়ে যাবে যে হিমু।  কি করবো.‌.‌.‌ কি করবো.‌.‌.‌’‌
 হেমন্তর বুক গুরগুর করে উঠলো। শেষে কি গাছটার বিপুল দেহভারের নিচে পিষ্ট হতে হবে?‌  কাল খবর হবে —  ঝড়বৃষ্টিতে গাছ পড়ে মৃত্যু এতজনের! কি করবে বুঝতে না পেরে,‌ নির্বাক সে ওই তুমুল ঝড়ের মধ্যে জানলা খুলে দাঁড়িয়ে রইলো। ততক্ষণে মঞ্জরী উঠে এসেছে। তার চোখে বিষ্ময়। গলায় তুমুল আশংকা নিয়ে হেমন্ত বললো, ‘‌ গাছটা এইবার পড়ে যাবে। আমাদের আর পাশের ব্লকটার খুব ক্ষতি হবে। কী হবে মঞ্জু?‌’‌ মঞ্জরী তাকে  টেনে সরিয়ে দিয়ে জানলা বন্ধ করতে করতে বললো, ‘‌ সেটা বুঝেও তুমি জানলা খুলে দাঁড়িয়ে রয়েছো। বৃষ্টিতে সারা ঘর ভেসে গিয়েছে দেখছো না। সরে এসো। সরে এসো।’‌
 সরতে সরতেই হেমন্ত শুনলো ভীষণ মড়মড়মড় শব্দ। গাছটার গুড়িটা যেন মাঝামাঝি ভেঙে পড়লো। সামান্য কয়েকটা জানলার কাঁচে  ডালপালা লেগে চিড় ধরলো। একটানা গোঙানির শব্দ ক্ষিণ থেকে ক্ষিণতর হতে হতে একসময় সব নিস্তব্ধ। থেকে থেকে শুধু হাওয়া হুংকার দিয়ে উঠতে লাগলো। যেন প্রবল প্রতিদ্বন্দীকে পরাজিত, ভূপাতিত করবার পরে দারুন উল্লাসে মেতেছে!‌
                                                      ৫
 পরদিন আকাশ নীল। ঝড় থেমে গিয়েছে ভোরেই। হেমন্ত ছুটে গিয়ে দেখলো তাদের আর পাশের ব্লকের মাঝে সামান্য জায়গাটুকুতে ডালপালা গুটিয়ে নিথর পড়ে রয়েছে দৈত্যাকৃতি গাছটা। পাশের ব্লকের প্রবীন অসিতবাবু বললেন, ‘‌ আহা। আমাদের আবাসনের কতদিনের পুরনো  শিশুগাছটা আমফানে পড়ে গেল মশাই। ওটা আমার বাবার বয়সী হবে।’‌
 ততক্ষণে একপাল শকুনেরই মতো দলে দলে লোক এসে হাজির । হাতে করাত কুড়ুল শাবল। গাছটার মৃতদেহ টুকরো টুকরো হয়ে যেতে লাগলো। এক বুক শোক নিয়ে বিধ্বস্ত হেমন্ত পায়ে পায়ে ফিরলো তার ফ্ল্যাটে।
  ‌ শিকড় সমেত গাছটাছ কেটে লোকেরা ফিরে যাবার মাসখানেক পরে গাছের গুঁড়ির জায়গাটা ঠিক একটা কবরের মতই ফুটে উঠলো যেন। হেমন্ত এক সন্ধ্যায় কয়েকটা ফুল হাতে  যেতেই  চাপা গলায় কে ডেকে উঠলো, ‘‌ হিমু’‌—
                                             ৬                            
পরের দিন সকালে হৃষ্টপুষ্ট শিশুগাছের চারা এনে হেমন্ত পুরনো গাছটার জায়গাতেই পুঁতে দিল। গাছটা তার সঙ্গে কথা বলতো কি বলতো না জানা নেই। হয়তো সবটাই তার কল্পনা। কিন্তু সে গাছটার মায়া কাটাতে পারবে না কোনদিন

0 comments: