সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
দুর্গা বন্দী
প্রবাহনীল দাস
মহালয়ার ভোরে ঘুম থেকে উঠে মা খুব অবাক হলেন। কিছুতেই বুঝতে পারছেন না তিনি কোথায় আছেন। চারদিকে অন্ধকার, শুধু একটা ছোট্ট ঘুলঘুলি দিয়ে ভোরের আলো ঘরে ঢুকছে।। উঠে বসার চেষ্টা করতে গিয়ে মা অবাক হলেন। তাঁর হাত পা কিছুতেই নাড়াতে পারছেন না, অথচ তিনি বুঝতে পারছেন, সেগুলো কোনো দড়ি দিয়ে বাঁধা নেই, আবার হাত পা অবশও হয়ে যায়নি। মা এবার একটু যেন ভয়ই পেলেন।
আজ তো তাঁর বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা। ছেলেমেয়েগুলো যদিও বড়ো হয়ে গেছে, তবুও তারা মায়ের সাথেই মামাবাড়ি যাবে। কিন্তু তাঁর সাথে তখন যে কী ঘটছে, মা কিছুতেই সেটা ঠাওর করে উঠতে পারছেন না।হঠাৎ শোনা গেলো একটা সিংহের ডাক। মা ভাবলেন, যাক সিংহবাহন তাকে ছাড়িয়ে নিতে এসেছে নিশ্চয়ই। খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন মা। কিন্তু না, দেখলেন অনেকগুলো সিংহর আওয়াজ আসছে। মা বুঝতে পারলেন, তিনি যেখানে বন্দি রয়েছেন, সেই জায়গাটায় পাহারা দিচ্ছে অনেকগুলো সিংহ। কিন্তু তাঁকে বন্দি করল কে? কার আছে এত সাহস?
এবার খালি পায়ের আওয়াজ পেলেন মা। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, একটা বেঁটে খাটো লিকপিকে লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে, হাতে একটা সেলফোন। খিকখিক করে হেসে উঠে লোকটা বলল, “কী, মা দুর্গা, সব ভালো তো? অসুবিধা হচ্ছে না তো কোনো? হলে বলবেন।”
গলাটা কেন জানি মায়ের চেনা চেনা ঠেকল। মা বোলো, “অ্যাই, কে তুই?”
“আমাকে চিনতে পারছেন না মা? আমি যে মহিষাসুর!”
“অ্যাঁ! মহিষাসুর? তোর তো এরকম লিকপিকে চেহারা ছিল না বাবা। সত্যি করে বল, তুই মহিষাসুর?”
“লিকপিকে চেহারা তো আপনার জন্যেই হয়েছে। এক বছরের পুজো শেষ হলেই তো আমি দিন গুনতে থাকি, আবার কবে পুজো আসবে, আর কবে ত্রিশূলের খোঁচা খেতে মর্তে ছুটতে হবে। কিন্তু আগের বার পুজো শেষ হতেই আমি ঠিক করেছি, আর নয়। বছর বছর মার খেতে আমি রাজি নই। তাই জন্যেই তো আপনাকে ধরে এনে বন্দি করে রেখেছি অতিমাত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে।”
“আমাকে ধরে আনলি কী করে?”
“শুনুন তবে। এবারে আমি কোনো কাঁচা কাজ করিনি। কৈলাসে আগে থেকেই আমার দুই গুপ্তচর স্যাটেলাইট পাঠানো ছিল। কাল রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ওরা আমাকে সংকেত পাঠায়। ওদের প্রোগ্রামিং করাই ছিল, আমি বোতাম টিপতেই ওরা আপনার ঘরে ঢুকে পড়ে, সবার চোখের অলক্ষ্যে। তারপর একা টেলিপোর্টের পোর্টাল তৈরি করে আপনাকে পাঠিয়ে দেয়। আপনি এখানে আসতেই আপনাকে আমার রোবটেরা আধুনিক বিছানায় শুইয়ে দেয়। আধুনিক বিছানা আপনাকে এক অদৃশ্য বাঁধনে বেঁধে রেখেছে, যা আপনি বুঝতে পারছেন না, অথচ ছাড়াতেও পারছেন না।”
“তুই কি ভেবেছিস, আমি কি নিজেকে ছাড়াতে পারব না?”
“বৃথা চেষ্টা করে কী করবেন, মা? আপনি নিজে তো নিজেকে ছাড়াতে পারবেনই না, আপনাকে কেউ ছাড়াতেও আসবে না। সবাই এখন মর্ত্যে চলে গেছে।”
“আমাকে না নিয়ে মর্ত্যে চলে গেলো? এ অসম্ভব।”
“আপনার একটা ডামি রোবটও বানিয়ে রেখেছিলাম, প্রোগ্রামিং করে। তাকেই সময় মত ওখানে টেলিপোর্ট করে দিয়েছি। ওরা জানেই না আপনি এখানে।”
মা খানিকটা হতাশ হলেন। তাঁর হাত পা ছাড়ানো তো অসম্ভব। তিনি একবার চোখ থেকে আগুন বার করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিচ্ছু হল না। তাঁকে কাবু করতে পারে এমন লোকও আছে দেখে মা খুবই ভেঙে পড়লেন।
হঠাৎ চারিদিক আলো হয়ে গেলো, তাঁকে যে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল সেটা যেন ভেঙে পড়ল। মহিষাসুরও আচমকা ঘটে যাওয়া এই কাণ্ডে খানিক ঘাবড়ে গিয়ে ধুপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। এমন সময় এক বিশাল চেহারার লোক লাফিয়ে পড়ল মহিষাসুরের ওপর। মহিষাসুর অজ্ঞান হয়ে গেলো। এবার মহিষাসুরের পিঠ থেকে উঠে দাঁড়ালো লোকটি। তাঁর এক হাতে কুঠার, অন্য হাতে হাতুড়ি। বিদ্যুতের ঝলকানি বেরোচ্ছে দুই অস্ত্র থেকেই।
মাকে প্রণাম করে সে বলল, “মা, আমি থর, অ্যাসগার্ড নামক স্বর্গে আমার বাস। মহাকাশে বেড়াতে বেরিয়ে কার্তিকের সঙ্গে আমার আলাপ হয়, সেই থেকেই আমরা পরম বন্ধু। কার্তিক আমাকে বলেছিল, পুজোর সময় আমি যেন আপনাদের দেখতে আসি। আমি সেই মতো আজই চলে আসি এখানে। কৈলাসে গিয়ে মহাদেবের কাছে শুনি, ওরা বেরিয়ে গেছে। মাঝ রাস্তায় আমিও ওদের ধরে ফেললাম।”
“আমাকে সবার সাথে আলাপ করাচ্ছিল কার্তিক। আপনার সাথে, মানে আপনার ডামি রোবটের সাথে কার্তিক যখন আলাপ করাচ্ছিল, তখন আমি দেখলাম, আপনি কেমন অদ্ভুত ভাবে চুপ করে গেলেন। এরকম কিছু যে হতে পারে, বোধহয় মহিষাসুর সেটা জানত না, আর তাই এই পরিস্থিতির জন্য কোন প্রোগ্রামিংও করে রাখেনি ও। আমি তখন কার্তিককে বললাম, ‘ব্যাপার ভালো নয় বন্ধু, এ তোমার মা নয়।’ কার্তিক বিশ্বাস করতে চাইল না। আমি বললাম, ‘তোমাদের মা তো দেবী, তাঁর তো আঘাত লাগে না, তাই না?’ সরস্বতী দিদি খানিক অবাক হয়েই বললেন, ‘তা অবশ্য লাগে না, কিন্তু তুমি কি করতে চাইছ?’ আমি বললাম, ‘ইনি যে তোমাদের মা নন, সেটা তোমাদের কাছে প্রমাণ করার জন্য আমাকে তাঁকে আঘাত করতে দাও।’ অগত্যা তারা রাজি হল, আমি হাতুড়ি দিয়ে একবার মারতেই ডামি রোবট ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। যতক্ষণ আমাদের এসব কোথা হচ্ছিল, ততক্ষণ রোবটও চুপ ছিল, কারণ তার তো এই পরিস্থিতির জন্যও কোন প্রোগ্রামিং করা ছিল না।”
“এবার সবাই অবাক হল। আমি রোবটের কন্ট্রোলারটা হাতে নিলাম। হাতুড়ি দিয়ে বিদ্যুৎ ডেকে এনে ফেললাম ওটার উপর। সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে গেলাম, ওর সংকেত আসছে কোথা থেকে। সেই সংকেত ধরেই চলে এলাম এখানে।”
দুর্গা বললেন, “ওরা এলো না?”
থর বলল, “আমিই ওদের বারণ করলাম। কারণ বিদ্যুতের গতিতে ওদের কারুর বাহনই আসতে পারত না। এখন আপনি চলুন। সবাই আপনার জন্য চিন্তা করছে।”
মা বললেন, “মহিষাসুরের কী হবে? ও না গেলে মারব কাকে?”
থর মাকে আশ্বস্ত করল, “ওকে এক্ষুনি বিদ্যুতের শক দিয়ে ঠিক করে তুলে নিয়ে যাচ্ছি। চলুন। আপনি না গেলে মর্ত্যবাসীরা চিন্তায় পড়বে।”
Subscribe to:
Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment