সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
সার্ধশতজন্মবর্ষে লেনিন ঃ কয়েকটি কথা
অপূর্বমোহন মুখোপাধ্যায়
২০২০ সালটি নানা ঐতিহাসিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ । আজ থেকে ২০০ বছর আগে বাংলায় জন্মেছিলেন নবজাগরণের দুই উজ্জ্বল জ্যোতিস্ক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দত্ত । আজও যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গী চিন্তায় এই দুই ব্যক্তি আমাদের পথিকৃৎ । সশ্রদ্ধ চিত্তে তাঁদের প্রণাম জানাই ।
আজ থেকে ২০০ বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি বৈজ্ঞানিক সমাজবাদের অন্যতম এক স্রষ্টা । শ্রমজীবী মানুষ তথা শোষিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকার এক অন্যতম স্থপতি রূপে তিনি আমাদের কাছে পরিচিত । সেই ব্যক্তি হলেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস । পৃথিবীর শোষিত মানুষ আজও তাঁকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করে ।
আজ থেকে দেড়শো বছর আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের শোষিত মানুষের মুক্তির স্বপ্নকে প্রথম বাস্তবায়িত করেন । সেই ব্যক্তি আর কেউ নন , সারা বিশ্বে তিনি পরিচিত লেনিন রূপে । ১৮৭০ সালে ২২ এপ্রিল ভোলগা নদীর তীরে রাশিয়ার সিমব্রিস্ক শহরে ইলায়া উলিয়ানভ ও মারিয়া আলেকসান্দ্রোভানার সন্তান ইলিচ উলিয়ানভ জন্মগ্রহণ করেন। মহান অক্টোবর বিপ্লবের রূপকার ছিলেন ইলিচ উলিয়ানভ। কিন্তু সারা বিশ্বের কাছে আজও এই মানুষটি লেনিন রূপে খ্যাত।
আলোচ্য নিবন্ধে লেনিনের সার্ধশতজন্মবর্ষে তাঁর চিন্তা যা আজও প্রাসঙ্গিক সেই সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপিত করা নিবন্ধকারের উদ্দেশ্য। নিবন্ধের প্রথম অংশে লেনিনের জীবন ও রচনা সম্পর্কে কয়েকটি কথা এবং দ্বিতীয় অংশে সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে লেনিনের তত্ত্ব ও একবিংশ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকা আলোচনা করার চেষ্টা করা নিবন্ধকারের লক্ষ্য ।
লেনিনের জীবন ও রচনা ঃ
লেনিনের বাবা ছিলেন শিক্ষক ও মা ছিলেন সংগীতজ্ঞ । লেলিনরা ছিলেন ছয় ভাই বোন । তাঁর দাদা আলেকসান্দর ছিলেন তাঁর প্রেরণা । ১৮৮৬ সালে লেনিনের বাবার মৃত্যু হয় । ১৮৮৭ সালে জার তৃতীয় আলেকজান্ডারকে খুনের অভিযোগ তাঁর দাদার প্রাণদন্ড হয় । এই ঘটনা লেনিনের জীবনের এক অন্যতম বড়ো ঘটনা যা তাঁর জীবনকে প্রভাবিত করে । প্রসঙ্গক্রমে এটা উল্লেখ্য যে , লেনিনের দাদার সাথেও তৎকালীন নারদনিক গোষ্ঠীর যোগাযোগ ছিল । লেনিনের জীবনের এই প্রতিকূল অবস্থায়ও তিনি পড়াশুনা ছাড়েন নি । তিনি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষ করে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হন । কিন্তু ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষাপর্ব শেষ করতে পারেন নি । ছাত্রদের প্রতিবাদী আন্দোলনের কারণে যুক্ত থাকার জন্য তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি পরর্বতী সময়ে ১৮৯১ সালে বহিরাগত ছাত্র হিসাবে সেন্ট পিটার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন । ১৮৯৩ সালে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গে চলে আসেন । তিনি যখন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন সেই সময় তাঁর মার্কস এঙ্গেলসের লেখার সাথে পরিচয় ঘটে । পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি মার্কসবাদে দীক্ষিত হন এবং মার্কসবাদী চক্রে যুক্ত হন । তিনি নারদনিকদের সমালোচনা করে প্রবন্ধ ও গ্রন্থ লিখতে শুরু করলেন । ১৮৯৩ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত লেনিনের যে সকল লেখা আমরা দেখি সেইসব লেখাগুলো রাশিয়ান বিপ্লবী চিন্তা ও কর্মধারার সাথে যুক্ত ছিল । ১৮৯৪ সালে লেনিন লিখলেন What the
“ Friends of
the People “ are and How they fight the Social-Democrats. ১৮৯৫ সালে তিনি লিখলেন The Economic content of Narodism and the criticism of
it in Mr. Struve’s Book . তিনি কেবলমাত্র লেখালেখির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখেন নি । তিনি সংগঠন গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন । প্রসংগক্রমে বলা যায় যে, লেনিন যখন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনায় যুক্ত ছিলেন তখন তিনি মার্কসবাদের প্রচারের জন্য ১৮৮৩ সালে প্লেখানভের নেতৃত্বে জেনিভায় রাশিয়ার প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন Emancipation of Labour Group গড়ে উঠলে তাতে যুক্ত হন । ১৮৯৫ সালে লেনিনের নেতৃত্বে সেন্ট পিটার্সবুর্গে গড়ে ওঠে League for
the Emancipation of the working class । রাজনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় । সাইবেরিয়াতে তাঁকে নির্বাসন করা হয় । ইতিমধ্যে ১৮৯৮ সালে লেনিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় রাশিয়ান সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টি । রাশিয়ায় শ্রমিকশ্রেণীর প্রথম রাজনৈতিক দল ।
লেনিন যখন সাইবেরিয়াতে ছিলেন তখন তাঁর সংগে নাদেজদা স্কায়ার সাথে পরিচয় ঘটে ও তাঁরা প্রণয়সূত্রে আবদ্ধ হন ।
লেনিনের নির্বাসন থেকে ফিরে আসার পর রাশিয়ার বিপ্লবী আন্দোলন এক নতুন মাত্রা পেল । আর. এস. ডি এল. পি .র মুখপত্র ইসক্রা প্রকাশিত হল ১৯০০ খৃষ্টাব্দে । লেনিন মনে করতেন যে , সংগঠনের মুখপত্র রাজনৈতিক প্রচারকও বটে । সংগঠনের মুখপত্রে নানা রচনা লেখার সাথে এই কালপর্বে সংগঠন আন্দোলনের পরিস্থিতি সংক্রান্ত নানা গ্রন্থ লিখতে শুরু করলেন । তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থসমূহ যথা ঃ- ১৯০২ সালে What is to be
done (কি করিতে হইবে ) । ১৯০৪ সালে one step forward , two step forward ( এক পা এগিয়ে , দু পা পিছিয়ে ) ১৯০৫ সালে Two Tactics of Social Democracy (সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসীর দুই কৌশল ) প্রকাশিত হয় । ইতিমধ্যে ১৯০৩ সালে আর. এল. ডি.পি.র দ্বিতীয় পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় । এই পার্টি কংগ্রেস ব্রাসেলস ও লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় । সেখানে সংগঠনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে মত পার্থক্য দেখা দেয় । সংগঠন দুটো ভাগে বিভক্ত হয় । একটি বলশেভিক ও অন্যটি মেনশেভিক । লেনিন ও তাঁর সহযোগীরা বলশেভিক রূপে পরিচিত হন । প্রসঙ্গতঃ এটা উল্লেখ্য যে , লেনিন ১৯০০ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত বেশীরভাগ দেশের মধ্যে থাকতে পারেন নি । কিন্তু দেশের বাইরে থাকলেও তিনি কিন্তু রাশিয়ার আন্দোলনের দিকনির্দেশ করেন ও অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন । ১৯০৫ সালে জানুয়ারী মাসে রাশিয়ায় বিপ্লবের সূচনা হলেও তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় । রাশিয়ার মধ্যেকার আন্দোলন সম্পর্কে , রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে লেনিন প্রতিনিয়ত খোঁজ রাখতেন । ১৯১২ সালে প্রকাশিত হল বলশেভিক পার্টির মুখপত্র প্রাভদা ।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া যখন যুক্ত হয়ে পড়ে তখন এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয় ঐ দেশে । ঐ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লেনিন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করার আওয়াজ তোলেন যার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত হয় মহান অক্টোবর বিপ্লব পরিবর্তিত ক্যালেন্ডার অনুসারে যা নভেম্বর বিপ্লব নামে সমধিক পরিচিত । ৭ই নভেম্বর থেকে ১৭ই নভেম্বর এই দশদিনের সংগ্রামের কাহিনী আমরা জানতে পারি বৃটিশ সাংবাদিক জন রীডের কালজয়ী লেখা ‘ দুনিয়া কাঁপানো দশদিন ‘ গ্রন্থের মাধ্যমে। লেনিনের নেতৃত্বে নভেম্বর বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠল এক নতুন ব্যবস্থা যা সমাজতন্ত্র নামে পরিচিত । শোষণহীন বৈষম্যহীন এক ব্যবস্থা কায়েম হল রুশ দেশে । বলশেভিক দল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে লেনিন কাউন্সিল অফ পিপলস কমিশারস এর সভাপতি হন । ১৯২৪ সালের ২১শে জানুয়ারি রুশ বিপ্লবের নায়ক মহামতি লেনিনের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। লেনিন ছিলেন সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অন্যতম রূপকার । তিনি একাধারে মার্কসবাদী তত্ত্বের বিকাশ ঘটিয়েছেন আবার সেই তত্ত্বকে তাত্ত্বিকস্তরে সীমাবদ্ধ না রেখে তার সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছেন । তিনি মার্কস-এঙ্গেলস প্রবর্তিত মার্কসবাদের তাত্ত্বিক বিকাশ ঘটান । দল , রাষ্ট্র , বিপ্লব , সর্বহারার শ্রেণীর একনায়কত্ব , সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর মৌলিক অবদান পরিলক্ষিত হয় । তাঁর চিন্তাকে বলে লেনিনবাদ। স্তালিনের ভাষায় , “ লেনিনবাদ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ যুগের মার্কসবাদ “। লেনিন মার্কসবাদের সৃষ্টিশীল বিকাশ ঘটিয়ে মার্কসবাদকে সমৃদ্ধ করেন । তাই মার্কসবাদ মার্কসবাদ লেনিনবাদ রূপেও পরিচিত । কয়েকটি গ্রন্থের নাম পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ঐগুলি ব্যতিরেকে তাঁর লেখা অন্যান্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করছি যা মার্কসবাদে অনন্য সংযোজন । সেগুলি হল ঃ- ১) The
Develpoment of Capitalism in Russia (1899) , ২) Materialism and Empirio-Criticism (1908), ৩) Imperialism : The
Highest Stage of capitalism (1916), ৪) The State and Revolution (1917) প্রভৃতি ।
দ্বিতীয় অংশ ঃ-
এই অংশে লেনিনের সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত তত্ত্ব ও আজকের সময়ে সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকা এই বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা করবো । প্রথমেই বলে রাখি যে, এই আলোচনার সীমাবদ্ধতা রয়েছে । সংক্ষিপ্ত পরিসরে তা করতে হবে। ফলে অনেক কিছু ব্যাখ্যা বা আলোচনা ইচ্ছে থাকলেও করা সম্ভব নয় । তাই আলোচক সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত লেনিনের ধারণাকে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবে । প্রথমেই বলা দরকার সাম্রাজ্যবাদ বলতে কি বোঝায় ? সাম্রাজ্যবাদের নানা সংজ্ঞা আছে । তার মধ্যে না গিয়ে সাধারণভাবে বলা যায় যে, একটি দেশ যখন অন্য একটি দেশের ভূখন্ড দখল করে সরাসরি সেই দখলীকৃত দেশের উপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভুত্ব কায়েম করে তখন তাকে সাম্রাজ্যবাদী দেশ রূপে গণ্য করা যায় ।
মার্কস এঙ্গেলস তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক সংকট । অন্তর্দ্বন্দ্ব
ও পতনের
বিষয়গুলিকে উপস্থাপিত
করেছিলেন ও
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার
প্রতিষ্ঠার কথা
উল্লেখ করেছিলেন
।
বিংশশতাব্দীতে পুঁজিবাদী
ব্যবস্থার যে
গুণগত পরিবর্তন
সূচিত হয়
মার্কসীয় বোঝাপড়ার
মাধ্যমে লেনিন
সেই পরির্বতনের
ব্যাখ্যা প্রদান
করেন ও
সাম্রাজ্যবাদ
সম্পর্কিত তাঁর
তত্ত্ব উপস্থাপিত
করেন । সাম্রাজ্যবাদ
সম্পর্কিত লেনিনের তত্ত্ব
মার্কসবাদে লেনিনের
এক মৌলিক
অবদান । ১৯১৬
সালে প্রকাশিত
হয় লেনিনের
গ্রন্থ Imperialism : The Highest Stage of Capitalism
( সাম্রাজ্যবাদ ঃ
পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ
পর্যায় ) এই
গ্রন্থে লেনিন
মার্কসীয় বোঝাপড়ার
ভিত্তিতে সাম্রাজ্যবাদের
বিশ্লেষণ করেন
।
এটি একটি
ছোটো গ্রন্থ
।
কিন্তু লেনিন
এই গ্রন্থটি
লিখতে গিয়ে
প্রচুর গবেষণা
করেন । প্রাপ্ত
তথ্য থেকে
জানা যায়
যে , ১৪৮
টি বই
ও ৪৯
টি পত্রিকায়
প্রকাশিত প্রবন্ধগুলি
তিনি পড়াশুনা
করে তাঁর
তত্ত্বকে বিকশিত
করেন ।
লেনিন
ব্যতিরেকে মার্কসবাদী
চিন্তার প্রেক্ষিতে
সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত
আলোচনা যাদের
লেখনীর মাধ্যমে
আমাদের কাছে
উপস্থাপিত হয়
, তাঁদের নাম
ও গ্রন্থ
উল্লেখ করা
হল ঃ-
১)
অস্ট্রিয়ার চিন্তাবিদ
রুডলফ হিল
ফারডিং তাঁর Finance Capital (1901) গ্রন্থে।
২)
পোল্যান্ডের মার্কসবাদী
বিপ্লবী রোজা
লুকসেমবুর্গ তাঁর
The Accumulation of capital (1913) গ্রন্থে
এবং ৩)
রাশিয়ার নিকোলাই
বুখারিন তাঁর
Imperialism and world Economy (1915) গ্রন্থে
সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে
আলোচনা করেছেন
।
এছাড়া উদারনীতিবাদী
দৃষ্টিভঙ্গীতে সাম্রাজ্যবাদ
সম্পর্কিত আলোচনা
করেছেন বৃটিশ
সাংবাদিক জন
হবসন তাঁর
Imperialism: A study (1902) এই গ্রন্থে
।
সাম্রাজ্যবাদ
সম্পর্কিত লেনিনের
তত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ
বিশ্লেষণ সংক্ষিপ্ত
পরিসরে সম্ভব
নয় । তাই
এই নিবন্ধে
লেনিন কর্তৃক
বর্ণিত সাম্রাজ্যবাদের
অর্থ সংক্ষেপে
আলোচনা করবো
।
তিনি সাম্রাজ্যবাদের
পাঁচটি লক্ষণের
কথা বলেছেন।
১) উৎপাদন
ও পুঁজির
কেন্দ্রীকরণ
বিকশিত
হয়ে
এরূপ
অবস্থায়
পৌঁছেছে যে , একচেটিয়া কারবার সৃষ্টি করেছে ।
২) শিল্পপুঁজির
সাথে
ব্যাঙ্ক
পুঁজির
মিলনের
ফলে
মহাজনী
পুঁজি
(Finance Capital) এর সৃষ্টি হয় ।
তাকে
ভিত্তি
করে
Financial Oligarchy প্রতিষ্ঠিত হয় ।
৩) পণ্য
রপ্তানি
থেকে
আলাদা
যে পুঁজি
রপ্তানি
তা গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে
উঠছে
।
৪) বাজার
বণ্টন
, উৎপাদানের
পরিমাণ
প্রভৃতি
বিষয়কে
কেন্দ্র
করে
গোটা
দুনিয়াটাকে
এরা
নিজেদের
মধ্যে
ভাগ
বাঁটোয়ারা
করে
নিয়েছে
।
৫) সবচেয়ে
বড়ো
বড়ো
পুঁজিবাদী
দেশগুলোর
মধ্যে
সারা
দুনিয়ার
অঞ্চলগুলির
ভাগ
বাঁটোয়ারা
সম্পূর্ণ
হয়ে
গিয়েছে
।
লেনিন
সাম্রাজ্যবাদের এই
লক্ষণগুলি বিবৃত
করে বলেন
যে , সাম্রাজ্যবাদ
হল পুঁজিবাদের
একটা নির্দ্দিষ্ট
ঐতিহাসিক পর্যায়
।
সাম্রাজ্যবাদের তিনটি
চরিত্রের উল্লেখ
করেন লেনিন
।
তিনি বলেন
, সাম্রাজ্যবাদ হলো
১) একচেটিয়া
পুঁজিবাদ ২)
পরগাছা পুঁজিবাদ
৩) মুমুর্ষু
পুঁজিবাদ । এইগুলির
বিশ্লেষণ
এখানে সম্ভব
নয় । তাই
এই বিশ্লেষণ থেকে
নিজেকে নিবৃত্ত
থাকতে হচ্ছে
।
তবে
এখানে এটা
বলা দরকার
যে , সাম্রাজ্যবাদ
আজও রয়েছে
যদিও আজ
প্রত্যক্ষভাবে কোনো
দেশ দখল
করা সম্ভব
নয় । তাই
সাম্রাজ্যবাদ তার
কৌশল পরিবর্তন
করেছে । আমরা
নতুন শব্দের
সাথে পরিচিত
হচ্ছি । সেটা
হচ্ছে নয়া
উপনিবেশবাদ।
নয়া উপনিবেশবাদে
আমরা
দেখতে পাই
যে, অর্থনৈতিক
সাহায্য, সামরিক
সাহায্য ইত্যাদির
মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী
দেশ তার
কর্তৃত্ব বজায়
রাখতে সচেষ্ট
হয় ।
বিংশশতাব্দীর
নব্বইয়ের দশক থেকে
আন্তর্জাতিক দুনিয়ার
মানচিত্রে এক
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন
সংঘটিত হয়
।
পূর্বতন সোভিয়েত
ইউনিয়ন সহ পূর্ব
ইউরোপের দেশগুলিতে
সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়
ঘটে আর
অন্যদিকে বিশ্বায়নের
নামে বর্তমানে
লগ্নীপুঁজির দাপট
পরিলক্ষিত হয়
।
অনেকে মনে
করেন যে
, বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদ
বলে কিছু
নেই । কিন্তু
তা নয়
।
এই প্রসংগে কয়েকটি
কথা বলে আলোচনা
শেষ করবো
।
এটা
আমাদের মনে
রাখতে হবে
যে , লেনিন
যখন সাম্রাজ্যবাদ
নিয়ে আলোচনা
করেছেন তার থেকে
আজকে পরিস্থিতির
গুণগত বদল
ঘটেছে । সেই
সময় লগ্নীপুঁজি
ছিল জাতিরাষ্ট্র
ভিত্তিক পুঁজি
।
কিন্তু আজকের লগ্নিপুঁজি
বিশ্বায়িত পুঁজি
।
লগ্নিপুঁজির আধিপত্য
সমগ্র বিশ্বজুড়ে
প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে
।
আরেকটি বিষয়
হলো দুটি
বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে
সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির
মধ্যে যে
দ্বন্দ্বের তীব্রতা
পরিলক্ষিত হয়
বর্তমানে তা
ততটা তীব্র
নয় কিন্তু
তাদের মধ্যে বিরোধের
অবসান হয়েছে
এটা ভাবাটাও
ভুল হবে
।
বর্তমান সময়ে
লগ্নিপুঁজির আধিপত্যের
স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদী
শক্তি তাদের
শক্তিকে সংহত
করার লক্ষ্যে
নতুন বিশ্বব্যবস্থা
গড়ে তোলার
উদ্যোগ গ্রহণ
করে । বর্তমান
সাম্রাজ্যবাদ অর্থনীতি
, রাজনীতি ও
মতাদর্শ এই
তিনটি ক্ষেত্রে
ক্রিয়াশীল । উদাহরণস্বরূপ
কয়েকটি বিষয়
উল্লেখ করছি
।
বর্তমানে তথ্য
ও প্রযুক্তির
যে উন্নতি
হয়েছে তার
প্রেক্ষিতে তথ্য
সাম্রাজ্যবাদ এর
উদ্ভব আমরা
প্রত্যক্ষ করি
।
বর্তমানে আমরা
বৃহৎ মিডিয়ার
ওপরে নিয়ন্ত্রণ
প্রত্যক্ষ করি
।
মিডিয়া এখন
একচেটিয়া পুঁজির
স্বার্থকে রক্ষা
করে।
সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির
ফলে পরিবেশের
ক্ষতি হচ্ছে
, জলবায়ুর পরিবর্তন
সংঘটিত হচ্ছে
।
সাম্রাজ্যবাদী দেশ
গণতন্ত্রের নামে
তৃতীয় বিশ্বের
উন্নয়নশীল দেশগুলোর
উপর তার
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত
করতে উদ্যত
হয়েছে । এইরকম
অসংখ্য ঘটনা
উল্লেখ করা
যেতে পারে
যার মাধ্যমে
এটা সহজেই
বোঝা যায়
যে , সাম্রাজ্যবাদ
আজও প্রাসঙ্গিক
।
নতুন আঙ্গিকে
বিশ্বে তার
উপস্থিতি সে
জানান দেয়
।
সমস্ত বিশ্বে
আজ দক্ষিণপন্থী
মতাদর্শ মাথাচাড়া
দিচ্ছে । দক্ষিণপন্থী
মতাদর্শের বিরুদ্ধে
লড়াই আর
সাম্রাজ্যবাদের নতুন
আঙ্গিককে উপলব্ধি
করে তার
বিরুদ্ধে লড়াই
এই দুটো
আজকের পরিস্থিতিতে
অত্যন্ত জরুরী
।
আর সাম্রাজ্যবাদের
বিরুদ্ধে লড়াই
সফল হতে
পারে সাম্রাজ্যবাদ
বিরোধী আন্দোলনকে
সংহত করার
মধ্য দিয়ে
।
শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে
ব্যাপক মানুষের
ঐক্য প্রতিষ্ঠিত
হলে সাম্রাজ্যবাদ
পরাজিত হবে
।
নতুন বিশ্ব
ব্যবস্থা গড়ে
উঠবে ।
ঋণস্বীকার ঃ –
এই
লেখাটা লেখার
জন্য আমি
নানারকম গ্রন্থ
ও পত্রিকার
সাহায্য নিয়েছি
।
আমি সকল
গ্রন্থের লেখকের
নিকট আমার
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করছি ।
তথ্যসূত্র ঃ-
১)
কমরেড লেনিন
ঃ- অমল দাশগুপ্ত
।
২)
রুশ বিপ্লবের
কাহিনী ঃ-
সুদর্শন রায়
চৌধুরী ।
৩)
মার্কসীয় রাষ্ট্রচিন্তা
ঃ- শোভনলাল
দত্তগুপ্ত ।
৪)
এন.বি
. এ কর্তৃক
প্রকাশিত ইলিচ
লেনিন ।
৫)
রাষ্ট্রবিজ্ঞান অভিধান
ঃ- অশোক
কুমার সরকার
।
৬)
মার্কসবাদী পত্রিকাসমূহ
৭)
লেনিন রচনাসংগ্রহ
0 comments:
Post a Comment