সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 পরশ লাগুক

কাকলি ঘোষ

ছেলেকে বাস থেকে নামতে দেখেই ভ্রু কুঁচকে উঠল পর্নার। কাদা মাখা জামা। কলারের কাছে ছেঁড়া।  এ কি ! 

“ জামার এই অবস্থা কি করে হল ?”কড়া গলায় প্রশ্ন করে পর্না। 

“ খেলতে গিয়ে ছিঁড়ে গেছে।” 

শুনেই রাগে মাথা জ্বলে যায়। কিরকম নির্বিকার মুখে বলছে দেখো! ইচ্ছে হয় দুম দুম করে দু ঘা বসিয়ে দেয়। আজকাল খুব বেড়েছে আস্পর্দা!এই সেদিন একখানা ইংলিশ গ্রামার বই হারিয়ে এল ! আবার কেনো।বাবার পয়সার গাছ আছে তো ! নতুন নতুন খাতা দুদিনেই শেষ।দেখতে চাইলে বলে স্কুলে জমা আছে।পরে দেখায়। কিন্তু হিসেবে গন্ডগোল যে একটা আছে সেটা স্পষ্ট বোঝে পর্ণা কিন্তু ধরার উপায় নেই। 

 আজকাল বন্ধুবান্ধব জোটাচ্ছে গুচ্ছের।এতদিন দুটো কি তিনটে পরোটা বা পাঁচ/ছটা লুচি তরকারি টিফিন দিত। এখন সে জায়গায় ছটা পরোটা আট দশখানা খানা লুচি দিতে হয়! কোন মানে আছে!ও কি সবাইকে খাওয়াবার ঠিকেদারি নিয়ে রেখেছে!এই সেদিন পর্যন্তও ছেলেটা এরকম ছিল না। ক্রমশ যেন বদলে যাচ্ছে! পরীক্ষায় বরাবর ফার্স্ট হয়। এবারে একটা অঙ্ক ছেড়ে এল। প্রশ্নপত্র দেখে অবাক পর্ণা। এ অংক তো না পারার নয়! তবে!! ছেলে নীরব। ফলে এই পরীক্ষায় আর প্রথম হওয়া হল না। কে কমল না কি নাম একটা নতুন ছেলে। সে ফার্স্ট হয়ে গেল! অথচ ছেলের তাতে কোন দুঃখ নেই। বরং মুখে চাপা হাসির ঝিলিক! 

 আর তাতেই অবাক শুধু না ভয় করে কেমন!। ও ছেলের মতিগতির তল পাচ্ছে না মোটেই। সবে তো ক্লাস সিক্স । এখনই যদি হাতের বাইরে চলে যায় --- এর পর কি হবে? ওর বাবার অবশ্য বিশেষ হেলদোল নেই। উল্টে বলে “ একবার ফার্স্ট হয় নি তো কি হয়েছে? ” 

বোঝাতে পারেনা পর্ণা। ফার্স্ট না হওয়াটা নয় ছেলের ভাবগতিকই চিন্তার বিষয়। এই যে জামাটা এরকম ছিঁড়ে এলো কোন তাপ উত্তাপ আছে? জানে তো। আর দু সেট কেনা আছে মার ভাঁড়ারে। কিন্তু আজ আর মানবে না পর্ণা। খুব বাড় বেড়েছে।

“ কি এমন খেলা যে এমন ভাবে জামা ছিঁড়ল?”

ঘরে ঢুকেই ছেলের কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে শুরু করে পর্ণা।আর পরক্ষনেই বিস্ময়ে বাক রোধ হয়ে যায় ওর! “ এটা কার জামা পরে এসেছিস? এটা তো তোর  নয়!”

ছেলে নিরুত্তর ! 

“ কথা কানে যাচ্ছে না ? কি হল কি ?” 

“ এটা কমলের।”

“ মানে ! তোর জামা কই ? ওরটা  পরেছিস কেন ?”

“ ওরটা ছিঁড়ে গেছে।তাই আমারটা ওকে  দিয়ে এসেছি। না হলে ও কাল থেকে স্কুলে আসবে কি করে ? ওই মৃন্ময়, আবীর ওরা ইচ্ছে করে ঠেলে ফেলে দিয়ে ওর জামা ছিঁড়ে দিল!”

গালে চড় খাবার মত চমকে যায় পর্ণা। ফুলে ফুলে কাঁদছে ছেলে। এতদিনের সব জমানো কথা কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে। 

“ ও টিফিন আনতে পারেনা।ওরা বড্ড গরীব!ওর গ্রামার বই নেই। হোমওয়ার্ক কি করে করবে?সবাই ওকে হাসে।জানো ও ফার্স্ট না হতে পারলে ওর স্কলারশিপ কাটা যাবে।ও আর পড়তে পারবে না।  সেদিন ওই অংকটা আমি করে এলে ও ফার্স্ট হতে পারতো?। ”

“ কিন্তু সরকারি স্কুলে তো পয়সা লাগে না। সেখানে গেলে ---”

“ কিন্তু এই স্কুলটা যে অনেক ভালো মা।” 

দু হাতে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে পর্ণা। আনন্দে গর্বে চোখে জল এসে যায় ওর!জীবনের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে ছেলে।ওর চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে ভেবে নেয় পর্ণা সামনের বছর থেকে সব কিছুই দু সেট করে কিনতে হবে ওকে! 

0 comments: