সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 যাবে না ঠাকুর দেখতে!

সুমিত রায়

            দুই মেয়ের পর ছেলে সন্তানের অপেক্ষার সমাপ্তি টেনে, রমাদেবীর কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিল-এক ছেলে সন্তান! নাম রেখেছিল বিক্রম দাস। কৈশোর পার করে যৌবনে পা দিতেই, বিক্রম চলে যায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে কলকাতায়। কলকাতায় একা থাকে। মার সারাক্ষণ চিন্তা- ছেলেটা একা একা কি করছে? কি খাচ্ছে?  এই বছরই অবশ্য বিক্রমের  ফাইনাল ইয়ার। তারপর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, বিক্রম ফিরবে  বাড়িতে।
             পূজায় অনেকদিন ছুটি, তাই বাড়িতে এসেছে বিক্রম। দীর্ঘ একবছর অপেক্ষার পর ছেলেকে পেয়ে মার বুক ভরে গেছে। চোখেরমনি ছেলেকে মা একমুহূর্ত চোখের বাইরে রাখতে চাইছেন না-এই কয়েকদিন। ছেলে কি কি খেতে পছন্দ করে, সবকিছুই তৈরি করার জন্য মা প্রস্তুত। এক এক দিন এক এক খাবার তৈরি করবেন।সেটাই হবে রমাদেবী এবারের দূর্গাপূজার কয়েকদিনের খাদ্যতালিকার বিশেষ খাবার।
          দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপে যখন নবমী পূজার আয়োজন চলছে- চলছে নবমীসাজে প্রতিমাদর্শন, দর্শনার্থীদের। সেই সময় বন্ধুদের সাথে পূজা ঘুরতে বেরিয়েছিল দাস পরিবারের একমাত্র ছেলে, বিক্রম- এবারের পূজার নতুন পাঞ্জাবী পড়ে। মা, রমাদেবী ছেলেকে বারবার খেয়ে বেরোতে বললেও, ছেলে শোনেনি সেই কথা। বলে যায় একটু পরেই চলে আসবে। মা, নবমী পূজার বিভিন্ন পদের খাবার সাজিয়ে বসে আছেন- ছেলের খাওয়ার অপেক্ষায়।
           দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও ছেলে খাবার খেতে এলো না। ছেলের অপেক্ষায় মা বসে আছেন খাবার থালা আগলে। অবশেষে সন্ধ্যার সময় জানতে পারলেন, বিক্রম বন্ধুদের সাথে বাড়ি থেকে কিছু দূরে ঘুরতে গিয়েছে। খবরটি শোনার পর মা, কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নবমীর সন্ধ্যায় ঠাকুরের বাতি লাগালেন। বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছেন, ছেলে আসার। ছেলে বলেছিল, রাতে মাকে সঙ্গে করে ঠাকুর দেখতে বেরোবে।
           সন্ধ্যাবাতি শেষ হয়ে যখন রাতের নবমীর আনন্দে মেতেছে পূজা মন্ডপ-তখনও বিক্রমের কোন খবর নেই।রাত ঘন হতেই মার চিন্তা ক্রমশ বেড়েই চলছে। বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন রমাদেবী। ছেলের, বাড়ি ফেরার অপেক্ষা- কখনও কখনও দুঃস্বপ্নের পর্দায় ঢেকে ফেলছে রমাদেবীকে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত আর্মি ছেলের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন নানা জায়গায়। নবমীর আনন্দ, দাস পরিবারে বিষাদে পরিণত হয়েছে। দুশ্চিন্তার কাপড়কে সরিয়ে- মা একবার বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন, একবার বাড়ির ভেতরে ঢুকছেন। কিছুতেই মন স্থির করতে পারছেন না।
     রাত ভোর হয়ে যখন পূজামণ্ডপ দশমীর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন দুঃখের কাঁধে বসে বিক্রমের দুর্ঘটনার খবর আসে! বজ্র ভেঙ্গে পড়ে দাস পরিবারে! অপ্রত্যাশিত খবরে মা, রমাদেবী বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন-কিছুতেই তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না বিক্রমের দুর্ঘটনা!
       গাড়িতে করে ঘুরতে যাওয়ার সময় এক ব্রিজের উপর, বিক্রমের গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গাড়িসমেত বিক্রম, নদীর জলে পড়ে যায়! রাতের অন্ধকারে তাকে আর দেখা যায় নাই। এখনও খোঁজ করছে উদ্ধারকারী দল। বাবা ছুটে গেলেন ঘটনাস্থলে। উদ্ধারকারী দল শেষ চেষ্টা ব্যর্থ করে বলে উঠলেন,'বিক্রমকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, এমনকি তার গাড়িরও কোন খবর নাই। ঘটনাটা এক রহস্য মোড়কে ঢেকে গেছে!'
          মণ্ডপে মণ্ডপে যখন বিসর্জনের বাজনা বেজে উঠেছে! চারিপাশে বইছে বিষাদের সুর! আশাহত হয়ে তখন বাবা ফিরে এলেন বাড়িতে।নিরুপায় বাবা বসে থাকলেন- ছেলের কোন খবরের অপেক্ষায়! বাড়িতে থাকা বিক্রমের পোষা কুকুরটিও আজ চিৎকার না করে চুপ করে বসে আছে, মেঝের এক কোনায়। চোখের জলে ভিজে গেছে- কুকুরটির চোখের নিচের অংশ। বারবার মার কানের পর্দায় ধাক্কা মারছে বিক্রমের কথাগুলো। মা কিছুতেই ছেলের দুর্ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। বারবার তার কানে বেজে উঠছে ছেলের গলা,'মা, আমি এসে গেছি, তুমি এখনো রেডি হওনি-যাবে না ঠাকুর দেখতে!'
মা দৌড়ে যান দরজায়, বারবার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসেন ছেলের বিছানায়। এইভাবে দিন যেতে যেতে কখন যেন এক বছর পার হয়ে, দূর্গা পূজার বাজনা বেজে উঠেছে আবার-তা রমাদেবী বুঝতে পারেননি।
         আজ সেই নবমী পূজা, মার বুকে ভেসে উঠেছে-হতভাগ্য সেই নবমীর রাত। আজও মা বসে থাকেন ছেলের অপেক্ষায়। তাকিয়ে থাকেন রাস্তার দিকে- বিক্রমের আসার অপেক্ষায়। কখন ছেলে এসে বলবে,'মা, আমি এসে গেছি, তুমি এখনো রেডি হওনি, যাবে না ঠাকুর দেখতে!'

0 comments: