সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

28,047
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

  বাঁধন

অশোক দেব 


আর কিছুক্ষণ, তারপরই বিদায় নেবে মেয়ে । নতুন ঘর, নতুন সংসার হবে তার নতুন ঠিকানা ।

এতদিনের চেনা জগতকে পিছনে ফেলে

আপনকে পর পরকে আপন করে নিতে শুরু হবে তার যাত্রা । 

রতন জানে এটাই মেয়েদের জীবন । চাকরির জন্য রতনকে প্রবাসে কাটাতে হয়েছে বছরের পর বছর।মেয়ের

ভূমিষ্ট হওয়া থেকে ধীরে ধীরে বড় হবার ধাপগুলো তার অজানাই রয়েগেছে আজও । 

ওর জন্মের পনেরো দিন বাদেই রতনকেকর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে হয়েছিল । প্রায় একবছর বাদে বাড়ি এসে দেখল,

মেয়ে কখনও হামাগুড়ি আবার কখনও টলমল পায়ে এঘর ওঘর করছে । হঠাৎবাড়িতে অজানা, অচেনা মানুষ দেখে সেপর্দার আড়াল থেকে চুপি চুপি চিনবার চেষ্টা করে ।বাবা আর মেয়ের ভালোবাসা, হৃদ‍্যতা,সখ‍্যতা আর সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই রতনের ছুটি শেষ হয়ে যায় ।

বাড়ি ছাড়ার মূহুর্তে রতনের দুচোখ ফেটে জল আসে । কিন্তু কঠিন অভিনয়ে সেইকষ্ট বুকে চেপে হাসিমুখে বিদায় নেয় সে ।

ওর  মা, স্ত্রী আর শিশুকন্যা কেউই রতনের ভিতরটা দেখতে পায় না । স্টেশনে কত লোক যায়, আত্মীয়স্বজন

আর নিকটজনকে ছাড়তে । রতনের জন্য কেউ যায়নি কখনও, কোনোদিন । বলা ভালো যাবার মত

কেউ ছিল না । সে বরাবর একাই চলেছে ।

রেললাইনের দুপাশের খাল গুলো বর্ষার জলে পরিপূর্ণ । সেখানে অজস্র লাল আর সাদা শাপলা ফুল ফুটে রয়েছে । বাড়ি আসার দিন ঐ দৃশ্য তাকে কত আনন্দ

দিয়েছিল । অথচ ফিরে যাবার সময় মনে হোলো সেসব কেবলই ছবি । 

কর্মক্ষেত্রে পৌঁছনোর দিন পনের পর স্ত্রীর চিঠি পেয়ে রতন জানতে পারল মেয়ে সারাক্ষণ খুব কান্নাকাটি করে । আর এঘর ওঘর খুঁজে বেড়ায় বাবাকে । কিছুতেই তার কান্না থামে না । শেষে রতনের ছবি দেখে আর তার ব‍্যবহারের জিনিসপত্র আর জামাকাপড়ে বাবার শরীরের গন্ধ পেয়ে , বাবার স্পর্শ পেয়ে চুপ হয়ে যায় । 

পরের বছর ছুটিতে এসে বাড়িতে ঢুকেই রতন শুনতে পায়  মেয়ে বলছে - আমার বাবা এসেছে । আমি চিনতে পেরেছি আমার বাবাকে ! আজ এই বিদায় বেলায়

প্রতিটি মূহুর্ত জীবন্ত হয়ে ওঠে রতনের চোখে ।

0 comments: