সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
বাঁধন
অশোক দেব
আর কিছুক্ষণ, তারপরই বিদায় নেবে মেয়ে । নতুন ঘর, নতুন সংসার হবে তার নতুন ঠিকানা ।
এতদিনের চেনা জগতকে পিছনে ফেলে
আপনকে পর পরকে আপন করে নিতে শুরু হবে তার যাত্রা ।
রতন জানে এটাই মেয়েদের জীবন । চাকরির জন্য রতনকে প্রবাসে কাটাতে হয়েছে বছরের পর বছর।মেয়ের
ভূমিষ্ট হওয়া থেকে ধীরে ধীরে বড় হবার ধাপগুলো তার অজানাই রয়েগেছে আজও ।
ওর জন্মের পনেরো দিন বাদেই রতনকেকর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে হয়েছিল । প্রায় একবছর বাদে বাড়ি এসে দেখল,
মেয়ে কখনও হামাগুড়ি আবার কখনও টলমল পায়ে এঘর ওঘর করছে । হঠাৎবাড়িতে অজানা, অচেনা মানুষ দেখে সেপর্দার আড়াল থেকে চুপি চুপি চিনবার চেষ্টা করে ।বাবা আর মেয়ের ভালোবাসা, হৃদ্যতা,সখ্যতা আর সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই রতনের ছুটি শেষ হয়ে যায় ।
বাড়ি ছাড়ার মূহুর্তে রতনের দুচোখ ফেটে জল আসে । কিন্তু কঠিন অভিনয়ে সেইকষ্ট বুকে চেপে হাসিমুখে বিদায় নেয় সে ।
ওর মা, স্ত্রী আর শিশুকন্যা কেউই রতনের ভিতরটা দেখতে পায় না । স্টেশনে কত লোক যায়, আত্মীয়স্বজন
আর নিকটজনকে ছাড়তে । রতনের জন্য কেউ যায়নি কখনও, কোনোদিন । বলা ভালো যাবার মত
কেউ ছিল না । সে বরাবর একাই চলেছে ।
রেললাইনের দুপাশের খাল গুলো বর্ষার জলে পরিপূর্ণ । সেখানে অজস্র লাল আর সাদা শাপলা ফুল ফুটে রয়েছে । বাড়ি আসার দিন ঐ দৃশ্য তাকে কত আনন্দ
দিয়েছিল । অথচ ফিরে যাবার সময় মনে হোলো সেসব কেবলই ছবি ।
কর্মক্ষেত্রে পৌঁছনোর দিন পনের পর স্ত্রীর চিঠি পেয়ে রতন জানতে পারল মেয়ে সারাক্ষণ খুব কান্নাকাটি করে । আর এঘর ওঘর খুঁজে বেড়ায় বাবাকে । কিছুতেই তার কান্না থামে না । শেষে রতনের ছবি দেখে আর তার ব্যবহারের জিনিসপত্র আর জামাকাপড়ে বাবার শরীরের গন্ধ পেয়ে , বাবার স্পর্শ পেয়ে চুপ হয়ে যায় ।
পরের বছর ছুটিতে এসে বাড়িতে ঢুকেই রতন শুনতে পায় মেয়ে বলছে - আমার বাবা এসেছে । আমি চিনতে পেরেছি আমার বাবাকে ! আজ এই বিদায় বেলায়
প্রতিটি মূহুর্ত জীবন্ত হয়ে ওঠে রতনের চোখে ।
0 comments:
Post a Comment