সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.


 

ভুত  মানেই  ভয়  নয় 

গোপা আচার্য 



এই মুহূর্তে পিকলু লুকিয়ে আছে  চিলেকোঠায়।অন্য সময় এই ঘরটা ওর কল্পনার ঘর;দাদুর অসমাপ্ত কাজের leberotery  এটা।কতো শিশি বোতল জার,ইলেকট্রনিক মেশিন,,,সব ছ ড়িএ  ছিটিয়ে আছে।কেউ ঢোকে না।দাদুর ছবি আছে একটা ধুলোমাখা।জন্মদিনের দিন নামানো  হয় নীচে।মাও অসেননা।মায়ের সময়েই নেই।মা একটা কলেজে পড়ান।সকাল বেলা  বেরিয়ে যান ফিরতে2 সন্ধ্যে।মাঝে2 পিকলু কে খুজ্তে মা এ ঘরে এসেই বলেন,'ইসস,কি ধুলো হয়ে আছেরে ঘর টা।এবাবা বাবার ছবি টাও  কি ধুলো পড়েছে।,,,মানসী,,,মানসী"-মা চেচিযে ডাকেন,"আরে এই ঘরটা ঝড়িস না কেন??"ঐ বলা টূকূই।মানসী মাসির বয়েই গেছে।সবাই বেরিয়ে গেলেই মানসী মাসি মেঝেয় শুএ পড়ে।তার পর ই বলবে"পিকলু বাবা ac তা চালিয়ে দাও তো,কি কাজের চাপ রে বাবা",,,,বলেই নাক ডাকবে।তখন পিকলু দাদুর ঘরে।সারা হলিডে গুলোতে মা বাবা না থাকলেই যন্ত্র  গুলো নিজের মনে নাড়া চারা করে নিজের মনে ভাবে বড়  হয়ে দাদুর মত বিজ্ঞানী  হবে,দাদুর অসমপ্ত  কাজ গুলো সারবে।আরে!কিভাবে করবে?সেটাই তো সমস্যা নইলে এখানে লুকিয়ে আছে কেন?সেটাই তো রহস্য।আজকের রেজাল্ট।অঙ্কে 28!বাবা অঙ্কের প্রফেসর ।বাবা 95 পাওয়া মানেই মনে করে জীবনের যোগ বিয়োগের 5 নম্বর কমে যাওয়া।তারপর আজকের নম্বর ।আসলে পিকলু নিজেই বুঝ্লনা কি হল?পরীক্ষা  হলে  বসে অঙ্ক করতে2আগের দিনের অসমাপ্ত গেম টার  সমাধান ভাবছি লো।তারপরে সব গোলমাল হয়ে গেল।

বাবা মা দুজনেই গেছেন parents teacher  মিটিংয়ে।ফিরে এসে কি যে  হবে??আবার সন্ধ্যা বেলায় ঐ গোমড়ামুখো অঙ্ক স্যার আসবেন।সব মিলিয়ে দিনটা খুবই  খারাপ যাবে বুঝতেই পারছে।ওকে বাঁচানোর জন্য একজন অবশ্য একজন আছে,,,,রনজয়  কাকু।যদিও সে নমাসে ছ মাসে একবার দেশে ফেরে।বিরাট ইঞ্জিনিয়ার,বাবার গর্বের ভাই।কথায়2 তুলনা দেওআ হয়।কিন্তু রণজয় কাকু খুব মজার মানুষ আসলেই হাসিতে গল্পে বাড়ি টা  ভরিয়ে রাখে।এখন এখানে আছেন।কি জার্নাল পরতে এসেছেন।এখন নীচের ঘরেই আছেন।যেতেই পারে,কিন্তু অঙ্কে fail  করার লজ্জাটুকু ওকে যেতে দিচ্ছে না।

ঝড় টা এলো বিকেলে।সারাদিন ওর খোজ কেউ করেনি,মা বাবা ফিরেছে টের পেয়েছে।ওকে কেউ খেতেও ডাকেনি।নিজেরাও খেয়েছে কিনা কে জানে?খিদে পেয়েছিল,কিন্তু কোন মুখে চাইবে  ভেবে চুপ করে রইলো।কিন্তু বিকেলে আর ঠেকানো গেলনা।বাবার বাজ্খাই গলার ডাক শুনে পা টিপে2 নীচে নামতেই বাবা ঝাপিযে পড়ল ওর ওপর সঙ্গে মায়ের হাউ মাউ  কান্না।বাবার প্রথম চড় টা  গাএ পড়ার পর ও ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছিল কিন্তু দ্বিতীয় টা  পড়ার আগেই বাবার হাত টা থেমে গেল আর একটা পরিচিত গলা শোনা গেল।"আরে দাদা কি করছিস?নম্বর না হয় কম পেয়েছে,তাবলে মারবি?আমেরিকা  হলে তোকে পুলিশ ধরত",বলে রণজয় কাকু পিকলু কে জড়িয়ে ধরল।এবার পিকলু র চোখ দিয়ে জলের ধারা  নামে।বাবা চেঁচিয়ে  ওঠেন,"রনো  তুই জানিস না,আজ কি অপমানিত হয়েছি।"

"আরে ঠিক আছে।সব ঠিক হয়ে যাবে ,আমি ওর সাথে কথা  বলছি।"বলে রণজয় কাকু ওকে টেনে একেবারে চিলেকোঠা র ঘরে নিয়ে গেলেন।ঘরে ঢুকেই কাকু কিছুক্ষণ  চুপ করে দাদুর ছবির দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে পিকলু র দিকে ফিরে বললেন"এই ঘর টা  তোর খুব পছন্দে র না?"অনেক সময় তোকে এঘরেই দেখি।পিকলু মাথা নেড়ে হা  বলতেই কাকু বল্ল "আরে বাবার ছবিটা তে কে পরিষ্কার করে ফুল রেখেছে রে তুই?"

পিকলু লজ্জা2 মুখ করে মাথা নাড়ে।

"তুই দাদুকে খুব ভালবসতিস  না?"

-হ্যাঁ।

-'তাহলে দাদুর মতো  হতে হবেতো?"-বলে রণজয় পিকলু র চুল টা  হাত দিয়ে ঘেঁটে  দেয়।

-হ্যাঁ  আমি তো হতেই চাই।কিন্তু অঙ্ক করতে বসেই মন টা  কোথায়  চলে যায়।জানো,ছোটো বেলায় দাদু অঙ্ক শেখাতেন  আমার খুব ভালো  লাগত।কিন্তু চলে গেলেন আর দাদুর মতো  কেউ শেখায় না।ঐ  স্যার এর কাছে আমার অঙ্ক  করতে একটুও ভালো  লাগেনা খালি বকেন।তাই সিক্স সেভেন আমার অঙ্কের রেজাল্ট  খুব খারাপ হচ্ছে।রণজয় কিছুক্ষণ  চুপ করে রইলো।মনে পড়ল বাবা ল্যাব  থেকে ফিরে অঙ্ক করাতেন  দাদা কে,আমাকে।আমরা কোনোদিন খারাপ করিনি।কিন্তু এই ছেলেটা দাদা কেও তো পায়নি।সে পিকলু র দিকে ফিরে বলল "পিকলু দাদুর ওপর বিশ্বাস রাখ খুব মন দিয়ে ডাক,দেখবি দাদু তোর কথা ঠিক শুনবেন।"


"তুমি ঠিক বলছো কাকু"?

"হ্যাঁ রে।"যা  নীচে  যা।ভাল করে খেয়ে ঘুমো।সন্ধ্যে বেলায় এসে দাদুর কাছে রোজ প্রার্থনা করে পরতে বসবি ,দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে"।

পিকলু সুবোধ বালকের মত ঘাড়  নেড়ে  নীচে  চলে গেল।রণজয়  বাবার ছবিতে একটা প্রণাম করে বাবার যন্ত্র পাতির  দিকে এগিয়ে গেল।

সন্ধ্যে বেলায় পিকলু পা টিপে2 ওপরে এলো ।দাদুর ছবির সামনে ফুল টা  রাখতেই ওর মনে হলো এমন একটা কিছু অদ্ভুত ঘটছে যেটা  ও ধরতে পারছে না।তারপরে বুঝল বাইরে অন্ধকার  নেমে গেছে,ও এখনো  মোমবাতি  জ্বালায় নি,কিন্তু দাদুর ছবি টা  ও এতো পষ্ট  করে দেখতে পারছে  কি করে?

দাদুর ছবি টা  ঘিরে  যেন এক নিলাভ বলয়।দাদুর মুখ টাও  কেমন হাসি2।এটা কি হচ্ছে??প্রচন্ড  ভয়  পেয়ে গেলেও ও ঘাবড়ে গেল না।ছবি টার দিকে তাকিয়েই রইলো।তখনি মনে হল কোথাও একটা হাল্কা সুরে  কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে।ও কান তা খাড়া করলো।আরে যেন মনে হচ্ছে না দাদুর গলা!!?ওর ভয়ে হাত পা ঠান্ডা  হয়ে গেলো,কিন্তু ও দাদুকে বড়  ভালবাসত তাই ও যেন ছবিটার সামনে থেকে নড়তেই  পাড়ল না ।আসতে 2 কথাগুলো যেন স্পষ্ট  হলো।দাদু যেন অনেক দুর থেকে ওর নাম ধরে ডাকছে।ওর হঠাত্ যেন সাহস  ফিরে এলো,দাদুকে ও খুউউব ভাল বাস তো।দাদু যদি আজ ফিরেও আসে  সে যেভাবেই  আসুক ওর ভয় নয় বরং ভরসা  হচ্ছে।ও ধীরে2 বল্ল" কি বলছো দাদু"?

দাদু মনে হল বলছে,"পিকলু  তোকে  খুব  মিস  করছি রে,তুই ও করছিস?

-হ্যাঁ  দাদু।"পিকলু র এবার চোখ ছলছল  করে  ওঠে।

-"তাহলে শোন্।আমার একমাত্র নাতি তুই।আমার অসামপ্ত  কাজ তুই  পারবি সমাপ্ত  করতে।কিরে,পারবি না"?পিকলু নিশব্দে  মাথা নাড়ে।

-"তাহলে যা ঐ  পেন টা  নে।ওটা  দিয়ে অঙ্ক করলেই 100 তে 100"।দাদু যেন হাল্কা হেসে ওঠে।

পিকলু তাকিয়ে দেখে দাদুর ছবির সামনেই একটা সোনার জলের রঙ করা  পেন।আরে!,এটাই তো সেই দাদুর পেন টা!!যেটা  বাবা অনেক দিন ধরে খুজে ছিলো।হারিয়ে গিয়েছিল তো পেন টা।তাহলে কি দাদু সত্য 2 ই এসেছে?!পিকলু র বুকের ভিতরটা কেমন করে ওঠে।এগিয়ে গিয়ে পেন টার দিকে তাকায়।যেন কোন এক অদৃশ্য  আলোয় ঝলমল  করছে পেন টা।হাত বাড়িয়ে পেন টা  হাত দিতেই যেন বিদ্যুতের  চমক খেল ও।চমকে  ওঠে।তখনই দাদুর গলা পেল ও।

-"কি দাদুভাই  লাগল নাকি?আমি ওতে শক্তি ভরে দিয়েছি।কিন্তু একটা শর্ত।এই পেন দিয়ে যখনই তুমি অঙ্ক করবে তখন একমন এক চিত্তে  সাধনা  করবে,কোনদিকে মন দেবে না।তাহলে কিন্তু এর শক্তি চলে যাবে।

এটা কিন্তু মনে রেখ"।

-হ্যাঁ  দাদু মনে রাখব আমি কখনো  অন্যমনস্ক  হবনা  দেখো।"এবার নীলভ আলোটা দপ করে নিভে যায।দাদুর গলা আর শুনতে পায়না ও।পেন টা  নিএই এক ছুটে রণজয় এর ঘরে আসে ও।-

-"কাকু দেখো  দাদু এসেছিলেন  আমায় আশীর্বাদ করে গেছেন আর এই পেন টা  দিয়ে গেছেন।আর আমায় পায়  কে এবার 100এ 100।",।উত্তেজনা তে ওর গলা কাঁপছে।ওর খুশী 2 মুখ টা  দেখে রণজয়ের  চোখ টা চিক 2 করে ওঠে।


এর দু সপ্তাহ পরের কথা।আজ remedial maths  এক্সাম এর রেজাল্ট  বেরনোর দিন।আজ রণজয়ের ও ফ্লাইট।সেও রেডি  হচ্ছে।রেজাল্ট  শোনার উত্সাহ তার ও কম নয় ।এই দু সপ্তাহ সে দেখেছে কিভাবে পিকলু দিন রাত এক করে খেটেছে,তাছাড়া দাদুর মন্ত্র পুত  পেন সত্যি কাজ করে কিনা সেটাও তো দেখার।এই দুই সপ্তাহে পিকলু র সাথে ওর দাদুর দু একবার কথা হয়েছে।এটা শুধু রণজয় আর পিকলু র সিক্রেট।বাড়ির  কেউ জানে না।দাদু বলেছে নাকি আর আসতে পারবে না।এখানে আসা  খুব কষ্টের।তাই পিকলু র মন খারাপ।তবুও সে দাদু কে আর কষ্ট  দিতে চায়না।

একটা গাড়ির  শব্দ হল না?আরে ঐত পিকলু কে নিয়ে পিকলু র মা নামল।পিকলু তো লাফাতে2 আসছে।মাএর মুখেও হাসি।পিকলু এসেই রণজয় কে জড়িয়ে ধরে,"কাকু আমি পেরেছি।আমি92 পেয়েছি।দাদুর ম্যাজিক আমায় জিতিয়ে দিয়েছে।"আরো কি সব বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়েই  চুপ করে গেল ও,তারপর রণজয়ের দিকে একটা অর্থ পুর্ণ  হাসি হেসে এক দৌড়ে চিলেকোঠা র দিকে দৌড়লো ও।

এখন দুপুর বেলা।পিকলু মায়ের ঘরে অকাতরে ঘুমোচ্ছে।আহা ঘুমোক।অনেক খেটেছে ও।চুপিচুপি রণজয় চিলেকোঠা র ঘরে ঢোকে।বাবার ছবির পিছন থেকে সব ইলেকট্রিক তার আর লুকনো মাইক্রোফোন  খুলতে2 নিজের মনেই বাবাকে বলে ওঠে,

-"সরি বাবা,এছাড়া কোন উপায় ছিলোনা।সবাই  বলে তোমার গলার স্বরের সাথে আমার খুব মিল,তাই এই সুযোগ টা  নিলাম।আসলে পিকলু র একটু motivation এর দরকার ছিল,আর সেটা তুমি ছাড়া কেউ পার তো না।তাই তুমি সেজে লাইট আর সাউন্ড এর মাধ্যমে ওকে motivate  করলাম।আর হ্যাঁ,কেউ জানত  না,তুমি মারা যাবার  পর তোমার স্মৃতি হিসাবে তোমার পেন টা সঙ্গে করে নিয়ে গেছিলাম,আজ যোগ্য উত্তর সুরী র কাছেই দিয়ে গেছি,দেখ ও ঠিক তোমার মান রাখবে,,,,,,আসি  বাবা,আমার ফ্লাইটের দেরী  হয়ে যাচ্ছে।।


0 comments: