সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 বইমেলার স্মৃতি

       কাজী সামসুল আলম 


সালটা ছিল 1987, তখন ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র, বাগনান কলেজে পড়ি। খবরের কাগজে নিয়মিত কলকাতা পুস্তক মেলার বিজ্ঞাপন দেখছি। গ্রামের ছেলে কখনও কলকাতা আসিনি, ছোটবেলায় একবার বাবা মার সাথে চিড়িয়াখানা ভিক্টোরিয়া জাদুঘর দেখতে এসেছিলাম। পাশের গ্রামের বন্ধু স্বপন জানা একই ক্লাসে পড়ে, একদিন বলল "কাজী বই মেলা যাবি?" আমি বললাম,"তু্ই যেতে পারবি? আমি তো কিছুই জানি না", ও বলল "হাওড়া নেমে মিনি বাস ধরে চলে যাবো।" কলেজে আমাদের ক্লাস হত ইভনিং, বিকেল  2.45 থেকে সন্ধ্যা 7.30 পর্যন্ত। ও বলল, "যেমন কলেজ যাই, ঐ টাইমে চলে যাব, বাড়িতে ফিরে আসব কলেজের মতোই, বাড়িতে কেউ কিছুই বুঝতে পারবে না।" রাজি হলাম, কিন্তু বইমেলা যাওয়ার টাকা নেই, নতুন একটা বই কিনতে হবে এই বুদ্ধি প্রয়োগ করে মায়ের কাছ থেকে একশো টাকা ঝাড়লাম। বইমেলা বললে মা কলকাতা যেতেও দিত না, টাকাও দিত না। এখানে একটু বলে রাখি কথা শুরুর দিকে  আমি বইমেলা যেতে গররাজি হওয়ায় স্বপন আমার যাতায়াত খরচ দেবে অঙ্গীকার করেছিল। আমরা কলেজ যেতাম বিনা টিকিটে, হাতে বই খাতা পকেটে কলেজের আই কার্ড থাকলে টিকিট চেকার ছাত্র-ছাত্রীদের টিকিট চাইতো না। স্বপন বলল, "হাওড়াতে টিকিট ছাড়া গেলে চেকার ছাড়বে না।" ওর বুদ্ধিমত আমরা হাওড়ার আগে কোনো এক স্টেশনে নেমে টিকিট কেটে নিয়ে পরের ট্রেনে হাওড়া যাবো, টিকিটের খরচ কম লাগবে। বীরসিবপুর স্টেশনে  ট্রেনে কিছু চেকার উঠল অন্য কামরায়, আমি ভয় পেয়ে বললাম, "স্বপন পরের স্টেশনে নেমে টিকিট কেটে নেবো চল।" সেইমতো উলুবেড়িয়া স্টেশনে নেমে টিকিট কাটতে যাচ্ছি, টিকিট ঘরের আগেই চেকার ধরল দুজনকে। কলেজ যাচ্ছি বললে আই কার্ড দেখতে চাইবে, তাই চট করে মাথায় এল, বললাম "টিউশনি পড়তে যাচ্ছি", কার কাছে উত্তরে একাউন্টান্সি বইয়ের লেখকের নাম বলে ফেললাম, "এস পি বসু।" উনি বললেন, "পুরো নাম কি?" আন্দাজে হঠাৎ মাথায় এল "শঙ্করী প্রসাদ বসু", কী মনে করে উনি ছেড়ে দিলেন। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। স্বপন আট টাকা দিয়ে হাওড়া রিটার্ন টিকিট কেটেছিল দুজনের। যাই হোক নতুন আবিষ্কারের মতো হাওড়ায় নেমে জিজ্ঞাসা করে মিনিবাস ধরে ময়দানে বইমেলা পৌঁছে ছিলাম।বাসভাড়া কত ছিল মনে নেই। তখন মনে হয় মেলায় ঢুকতে টিকিট কাটতে হত, একটাকা টিকিট ছিল.... তবে মেলায় এতো রকমের বই দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল, কাছে মাত্র একশো টাকা। আমাদের পাড়ার মুন্না মামার দোকানে "আজকাল" কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে এসেছিলাম, কামিনী প্রকাশনা থেকে এক খন্ডে শরৎ রচনাবলী কিনলাম ষাট টাকা দিয়ে।  বাকি টাকা দিয়ে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট থেকে আমাজনের জঙ্গলে, ম্যাক্সিম গোর্কির short stories ও Sundrban Tales ....কিনেছিলাম। তিন বছর ধরে শুধু শরৎ পড়েছি। সেই বইটি আমার দেশের বাড়িতে আমার সেজভাই মুকুলের বইয়ের আলমারিতে আজও আছে। এরপরে গত বছর পর্যন্ত বহুবার বইমেলা গেছি, নিজের জন্য মেয়ের জন্য। কিন্তু প্রথমবার মেলা যাওয়ার এডভেঞ্চার ভুলবো না। বই কেনার সেই দুঃখ এখন আর নেই... মেয়ে যা কিনতে চায় কিনে দিই। নিজে আজও কিনে চলেছি পড়ে চলেছি, গল্প,উপন্যাস,ছড়া কবিতা, ইতিহাস, ধর্ম, জীবনী, সংবিধান সব রকমের বই।


0 comments: