সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
পলিথিন
অঙ্কুর রায়
সামনের কফিটা কখন ঠান্ডা হয়ে গেছে ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম খেয়ালই করেননি। নিজের চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছেন । টানা বাইশ ঘণ্টা কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন তিনি। মিনিট কুড়ির ফাঁক পেতেই চোখটা যে কখন লেগে গেছে তিনি জানতেও পারেননি।
মেট্রনের ডাকে ডাঃ আলম চমকে উঠলেন।
-- '' স্যার। স্যার। ডাঃ বোস আপনাকে এখুনি একবার আসতে বললেন। একটু আগে যে নতুন পেশেন্ট ভর্তি হয়েছে তার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল। ''
দ্রুত হাতে পি পি ই পরতে পরতে মেট্রনের থেকে ডিটেলস নিলেন ডাঃ আলম। ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে , যেখানে নতুন পেশেন্ট এলে প্রথমে রাখা হয় সেখানে পেশেন্টকে দেখে চমকে গেলেন ডাঃ আলম। নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে অন্য পেশেণ্টদের দেখে নিজের টেবিলে এসে বসলেন। এক কাপ কফি দিতে বলে মাস তিনেক আগের ঘটনাটা মনে মনে ভাবছিলেন ডাঃ আলম। জীবনে এতটা অপমানিত তিনি কখনও হননি।
তাঁর বাড়ি থেকে হাসপাতাল বেশ অনেকটা দূর হয়ে যায় বলে হাসপাতালের কাছেই তিনি একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। যখন তিনি পছন্দ করেন , বুকিং করেন এমনকি কেনেন তখনও কিছু অসুবিধা হয় নি। কিন্তু যেদিন তিনি মালপত্র নিয়ে পরিবারের সাথে নতুন কেনা ফ্ল্যাটে উঠতে এলেন সেদিনই যত ঝামেলা। সবে ফ্ল্যাট বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে তিনি নেমেছেন দশ পনেরটা লোক কোথা থেকে এসে তাঁদের ঘিরে ধরলো , মাথায় গেরুয়া ফেট্টি , হাতে বড় বড় বাঁশ , রড । তাদের একটাই কথা হিন্দু পাড়ায় কোন মুসলমানের থাকা হবে না। তিনি যত বোঝান তিনি এই ফ্ল্যাট কিনেছেন , তিনি একজন ডাক্তার, কাছের হাসপাতালেই তিনি পোস্টেড --- কেউ কিছু শুনতেই রাজি নয়। আর এই লোকটা , এই নতুন পেশেন্ট ছিল ঐ গুণ্ডাদের পাণ্ডা। সবচেয়ে বেশি চিৎকার ওই করছিল। তিনি তখন বাধ্য হয়ে পুলিশকে ফোন করলেন। পুলিশ এসে সব শুনে বললো -- '' দেখুন এটা কম্যুনাল ব্যাপার । আমরা কিছু করতে পারবো না। আমাদের পরামর্শ আপনি ফিরে যান। নয়তো আমরা চলে গেলে একটা খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। '' তিনি তখন হতাশ হয়ে বললেন '' আমি এখন কোথায় যাব ? '' এই লোকটা তখন এগিয়ে এসে বলেছিল -- '' কেন আপনি পাকিস্তানে চলে যান । '' এত রাগের মধ্যেও তিনি হেসে ফেলেছিলেন । এরা কী ভাবে মুসলমান হলেই পাকিস্তানে চলে যেতে হবে ? চলে যাওয়া যায় ? তিনি বললেন - '' ওরা আমাকে ঢুকতে দেবে কেন ? আমি তো ইণ্ডিয়ান । '' কিন্তু কোন কথাতেই কোন কাজ হয়নি। চলে আসার আগে ডাঃ আলম বলেছিলেন -- '' আমি জানি না এখন কোথায় যাব ? পুরানো বাড়ি আমি বিক্রি করে দিয়েছি । এবার বোধহয় গাছতলায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে ।''
ঐ লোকটা তখন হাতে একটা পলিথিন ধরিয়ে বলেছিল -- '' এই নিন এটা পেতে গাছতলায় শোবেন । আপনার জন্য শুধু এটুকু করতে পারি। ''
দিন কুড়ি পরে ঐ লোকটা যখন করোনামুক্ত তখন পেশেন্টকে ডিসচার্জের সময় ডাঃ আলম মেট্রনকে বললেন -- '' দুশো দশের পেশেণ্টের সাথে আমি একটু কথা বলতে চাই। এখানে একটু নিয়ে আসুন তো । '' কিছুক্ষণ পরে মেট্রনের সাথে ঘরে ঢুকে ডাঃ আলমকে দেখেই চমকে গেল লোকটা। মেট্রন বললেন -- '' ইনি ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম। এনার জন্যই আপনি এই যাত্রায় বেঁচে গেলেন। ''
ওনাকে থামিয়ে দিয়ে ডাঃ আলম বললেন -- '' উনি আমাকে খুব ভালো করেই চেনেন। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ।''
ওই লোকটার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে বললেন -- '' আপনার দেওয়া সেই পলিথিনটা আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম । আমার কোন কাজে লাগেনি । তবে আরেকটু হলে আপনার নিজের জন্যই এটা ব্যবহার করতে হোতো । ''
Subscribe to:
Comments (Atom)
7 comments:
ভীষণ সুন্দর হয়েছে ।
অশেষ ধন্যবাদ দাদা।
জানি না এই ফাটল কবে মিশে গিয়ে এক হব আমরা। ধর্মের উপরে উঠে আমরা মানুষ বলে আমাদের পরিচয় দেব। মন ছুঁয়ে গেল গল্পটা। খুব ভালো হয়েছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।
Osadharon. Kobe je Abar Amra communal mukto hobo ke Jane?
অসাধারণ উপস্থাপনা ও সময়োপযোগী।
পৃথিবীতে ধর্মের নামে যত হানাহানি হয়েছে অন্য কোন কিছুই তার সাথে তুলনীয় নয়।লেখাটি যুগোপযোগী এবং মনোগ্রাহী। আরও ভালো লেখা পাবার আশায় রইলাম।
Post a Comment