সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

       আমার হস্তীদর্শন :-সন্তান শোক ।

  (প্রথম পর্ব )

অনুরাধা মুখার্জি

        

      বুনো হাতির সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার মোলাকাত হয়েছে ।কিন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো যখন তাদের দেখতে তোড়জোড় করে জঙ্গলে গেছি, তখন তাদের উপস্থিতির আভাস পেলেও দর্শন পাইনি ।কখনো আবার আচমকা বাড়ীর পিছনেই তাদের দেখা পেয়েছি ।সেই রকম আচমকা হস্তীদর্শনের অভিজ্ঞতা কয়েকটি পর্বে পেশ করব ।আজ তার প্রথম পর্ব ।

                আমার কর্মক্ষেত্র ছিল তদানীন্তন দক্ষিণ বিহারের অধুনা ঝাড়খণ্ডের এক ছোট্ট শহর চাইবাসা ।ইস্পাত নগরী জামশেদপুর থেকে ঘন্টা দেড় -দুয়েক দূরে পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা এই শহরটি তার আদিম সৌন্দর্যের জন্য বাংলা সাহিত্যে সেই সত্তরের দশকেই বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছিল ।

              সত্তরের দশকের একদম শুরুতেই আমি চাকরি জয়েন করি ।আমার বাসাটি ছিল শহরের একদম শেষ প্রান্তে ।তারপর আর কোনো জনবসতি নেই, শুধুই ধানক্ষেত,দূরে রেললাইন চাষজমির মাঝামাঝি সীমন্তরেখার মত চলে গিয়েছে।সুদূরে সবুজ বনানীর প্রান্তভাগ দেখা যায় আর ধূসর পাহাড়ের শ্রেণী শহর টিকে ঘিরে রয়েছে।সেই পাহাড় আর জঙ্গলের নিসর্গ শোভা আমার মতো শহুরে মানুষের মন পুরোপুরি কেড়ে নিয়েছিল ।চাকরির সময় টুকু ছাড়া আমার বাকি দিন চলে যেত শুধু চারদিক চেয়ে দেখতে দেখতে ।

          একদিন সন্ধ্যার সময়ে দোতলার বারান্দাতে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে জ্যোৎস্না রাতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছি, এমন সময়ে একটা প্রচণ্ড আর্তগর্জনে রাতের স্তব্ধতা খানখান হয়ে গেল ।তারপর আবার সেই আর্তনাদ ।আমি ভীতত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি দলে দলে লোক সেই ধানক্ষেতের আলপথ ধরে ছুটে চলেছে ।অনুসন্ধানে জানলাম হাতির দল রেললাইন পার হয়ে জঙ্গলের দিক থেকে শহরের দিকে আসছিল, মালগাড়ির ধাক্কায় দলছুট হয়ে গেছে কিছু হাতি আর দুএকটা বোধ হয় মারাও গেছে ।অল্পবয়সের কৌতূহলে আমিও অনুসরণ করলাম জনতার ।দেখি একটা বাচ্চা হাতি মাটিতে পড়ে আছে আর গুটিতিনেক বড় হাতি প্রাণপণে তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে ।মা -হাতির আর্তনাদে নৈশপ্রকৃতি কেঁপে কেঁপে উঠছে ।পরদিন সকালে বনকর্মীদের আপ্রাণ চেষ্টায় মৃত শাবক ছেড়ে হাতি কটি জঙ্গলে ফিরে গেল ।ওই ক্ষেতের মাঝেই হস্তীশিশুকে সমাহিত করা হল । কিন্তু রাতে আবার আর্তনাদ ।চাঁদের আলোতে দেখলাম এক বিশাল হাতি ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে কাতরভাবে শাবক কে ডেকে চলেছে ।প্রায় সপ্তাহ খানেক প্রতি রাতে ওই আর্তনাদ সমানভাবে চলল যদিও দিনে সে থাকত না ।তারপর আর শুনিনি, হয়তো সেও বুঝতে পেরেছিল যে শত কাঁদলেও আর তার সন্তান ফিরে আসবে না ।বহুদিন হয়ে গেছে তবু আজও মাঝে মাঝে মনে পড়ে হাতী-মার সেই করুণ কান্না ।তার সন্তান শোক কোনো মানব জননীর চেয়ে কম ছিল না ।

                                                                                                                    (চলবে )।

0 comments: