সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 বিক্রমের শাস্তি

সুমিত রায়
         
          অনুপমা দেবীর একমাত্র ছেলে বিক্রম, ক্লাস ফোরের ছাত্র। বাবা দেবেশবাবু  বিক্রমকে নিয়ে সকালে একইসাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বিক্রমকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যান দেবেশবাবু। দেবেশবাবু একজন সরকারি  ইঞ্জিনিয়ার। স্কুল থেকে বিক্রমকে নিয়ে আসেন অনুপমা দেবী।
        স্কুল থেকে ফিরেই শুরু হয়ে যায় বিক্রমের দুষ্টামি। চারদেওয়ালের বদ্ধ ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে কি করবে, না করবে- কিছুই ঠিক করে উঠতে পারে না। মার সাথে চিৎকার-চেঁচামেচি লেগেই থাকে স্কুল থেকে আসার পর।
        অন্যদিনের চাইতে বিক্রমের দুষ্টামির মাত্রা আজ একটু বেশি। মার সাথে বিক্রমের ধস্তাধস্তিতে টেবিল থেকে কাঁচের ফ্রেমে বাঁধানো একটি ফটো মেঝেতে পড়ে যায়। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় ফটোটি। দেবেশবাবুর ছাত্র জীবনের স্মৃতি হিসেবে সেই ফটো ফ্রেমটি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে টেবিলের উপর ছিল। এত বছরের পুরানো ফটো ফ্রেম ভেঙ্গে ফেলেছে বিক্রম। মা খুব বকাবকি করলেন। বললেন,'আজকে তোর বাবা আসুক...দেখবি, কেমন শাস্তি দেয় তোকে।'
বাবা শাস্তি দেবে এটা ভেবে বিক্রম খুব ভয় পায়। শাস্তির ভয়ে দুষ্টামি কমতে শুরু করেছে।
          অনুপমা দেবীও ভাবছেন,'এতবছরের ফটো ফ্রেম ভেঙ্গে ফেলার কথা শুনে নিশ্চয়ই, বিক্রমের শাস্তি হিসেবে খুব মারবে তার বাবা। আজকে যে কি শাস্তি অপেক্ষা করে আছে বিক্রমের কপালে কে জানে। শাশুড়ি মা থাকলে একটু রক্ষা পেত বিক্রম। কিন্ত শাশুড়ি মা তো মেয়ের বাড়িতে ঘুরতে গেছে,আসতে দেরি আছে।'
           কাঁটায় কাঁটায় বিকেল পাঁচটার সময় দেবেশবাবু বাড়ি ফিরলেন। গ্যারেজে গাড়ি ঢুকানোর শব্দ যখন বিক্রম শুনতে পেল, তখন বিক্রম শাস্তির ভয়ে ঘরের এক কোণে লুকিয়ে থাকলো এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
         ঘরে ঢুকেই অনুপমা দেবীকে একটু অন্যরকম দেখে দেবেশবাবু, পুরানো স্বভাব ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন,'কি হয়েছে অনু?'
দীর্ঘ চাপা নিশ্বাস ফেলে অনুপমা দেবী বললেন,'আর কি হবে, এক বড় অনিষ্ট করে ফেলেছে তোমার ছেলে।'
'কি এমন বড় অনিষ্ট করেছে বিক্রম? বল তাড়াতাড়ি।' প্রশ্ন দেবেশ বাবুর।
অনুপমা দেবী বললেন,'জানোই তো, ছেলের দুষ্টামির কথা।স্কুল থেকে ফিরেই আমার সাথে ধস্তাধস্তি করতে করতে সে তোমার অনেক বছরের পুরানো ফটো ফ্রেমটি ভেঙ্গে ফেলেছে...।'
স্ত্রীর কথা শেষ না হতেই দেবেশবাবু জিজ্ঞেস করলেন,'ওর কোন ক্ষতি হয়নি তো?'
'না' গম্ভীরভাবে অনুপমা দেবীর উত্তর।
'কোথায় বিক্রম?' আদরের সাথে দেবেশ বাবু বিক্রমকে খোঁজ করতে লাগলেন।
         শাস্তির ভয়ে জড়োসড়ো, চোখের জলে ভেজা গালে বিক্রমকে ঘরের এক কোনা থেকে উদ্ধার করলেন দেবেরবাবু। ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে দেবেশবাবু বললেন,' কাটছো কেনো বিক্রম?ফটো ফ্রেম ভেঙেছো তো কি হয়েছে, তুমি কি ইচ্ছা করে ভেঙ্গেছো?'
'না, আমার হাত লেগে টেবিল থেকে ফটোফ্রেমটি মেঝেতে  পড়ে ভেঙে গেছে।' কান্নার সাথে ছেলের উত্তর।
        ছেলের প্রতি, দেবেশ বাবুর উষ্ণ ব্যবহারে অবাক হয়ে গেলেন অনুপমাদেবী। তার ধারণা ছিল বিক্রমকে শাস্তি হিসেবে  বকাবকির সাথে সাথে খুব মারবেন। তা না করে আদর করছেন। উপরন্তু বিক্রমকে বললেন,'বাবা, তাড়াতাড়ি টিফিন খেয়ে পড়তে বস। সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে আমি বাজারে যাব ফুটবল কেনার জন্য।'
অনুপমা দেবী আরো অবাক হয়ে গেলেন এটা দেখে যে, বাবার কথা শুনে- বিক্রম সুবোধ বালকের মতো টিফিন খেয়ে পড়তে বসেছে।
         দেবেশবাবুকে খেতে দিয়ে অনুপমা দেবী জিজ্ঞেস করলেন,'আজকের এই ঘটনায় বিক্রমকে শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে ভালো ব্যবহার করার পিছনে কি কারণ রয়েছে?'
দেবেশবাবু চায়ে চুমুক দিতে দিতে অনুপমা দেবীকে বললেন,"যে কোন শাস্তি সন্তানের সঙ্গে পিতা-মাতার দূরত্ব বাড়িয়ে, তাদের উপর পিতা-মাতার প্রভাব কমিয়ে দেয়। ফটো ফ্রেম ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমি যদি তাকে শাস্তি দিতাম, তাহলে আরো বড় গন্ডগোলের সৃষ্টি হতো। এখনকার মতো বিক্রম পড়তে বসতো না শান্ত হয়ে।
            জানো অনু, 'বাচ্চা যতটা কষ্টে থাকে, ততটাই কঠিন আচরণ করে। আমরা যদি মারধর করি, শাস্তি দেই, চিৎকার-চেঁচামেচি করি তবে শিশুরাও সেই উগ্রতা শিখবে।'
           গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, প্রকৃতপক্ষে শিশুকে শাস্তি দিলে তারা আরো বেশি অসদাচরণ করে। শাস্তি পেলে শিশুরা আরো উগ্র আর আত্মরক্ষামূলক আচরণ করে।'
             তুমিতো বিজ্ঞানের ছাত্রী, জানো নিশ্চয়ই-অ্যাড্রিনালিন হরমোন প্রবাহ, ভয়, রাগ কিংবা বকাবকিতে হরমোনের  প্রবাহ বেড়ে যায় আর একই সঙ্গে যুক্তিযুক্ত ভাবনাকে ব্যাহত করে দেয়। কি কারণে তারা শাস্তি পেয়েছিল  সেটাও দ্রুত ভুলে যায়,বরং পরবর্তীতে তারা শেখে মিথ্যা কথা বলা যাতে পরেরবার ধরা না পড়ে।
          সোজা কথা একজন দায়িত্বশীল, বন্ধুপ্রতিম আর সুখী সন্তান তৈরি করতে-শাস্তি কোন সাহায্য করে না। শাস্তি শুধু ভুল শিক্ষাই দেয়।"
      দেবেশবাবুর কথা এতক্ষণ একনিষ্ঠা ছাত্রীর মতো শুনছিলেন স্ত্রী অনুপমা দেবী। চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে স্ত্রীকে বললেন,'যাও-তাড়াতাড়ি রেডি করে দাও বিক্রমকে, বাজারে নিয়ে যাব। আর তোমার জন্য কিছু কি আনতে লাগবে....?'

1 comments:

Unknown said...

সুন্দর ও শিক্ষামূলক ভাবনা।