সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
প্রচ্ছদ- অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী |
সম্পাদকীয়
বাংলা রেনেসাঁর শেষ প্রতিনিধি
------------------------------------------------
বিশ্বজুড়ে এই অতিমারী আবহেও বাংলায় সত্যজিত রায়ের জন্মশতবর্ষ যতটা সম্ভব উদ্দীপনার সাথে পালন করার চেষ্টা চলছে । বহু পত্রপত্রিকা মে মাস জুড়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছেন , বাংলা ফিল্ম চ্যানেল ওনার বেশকিছু ছবি দেখিয়েছেন , সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সত্যজিতকে সশ্রদ্ধ স্মরণ করেছেন । এই পরিস্থিতিতে যা যা করা সম্ভব তাই তাই করা হয়েছে সত্যজিতকে স্মরণ করার জন্য ।
বাংলার মানুষ যে এখনও লেখক সত্যজিত , শিল্পী সত্যজিত এবং সর্বোপরি পরিচালক সত্যজিতকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন এটা আশার কথা । কিন্তু কোন সত্যজিতকে বাংলা ও বাঙালি স্মরণ করছেন ? যে সত্যজিত অস্কার জয়ী , বিশ্ব বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সেই সত্যজিতকে ? যিনি ফেলুদা , প্রফেসর শঙ্কু , তারিণী খুড়োর অমর স্রষ্টা তাঁকে ? যিনি বাংলা চলচ্চিত্রে সুর ও সঙ্গীত যোজনায় নতুন পথের দিশারি তাঁকে ? নাকি সেই সত্যজিতকে যিনি বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণকে শিল্পকলার সর্বোচ্চ স্তরে তুলে নিয়ে গেছেন তাঁকে ? এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজে পাওয়া অত্যন্তই গুরুত্বপূর্ণ বাঙালির আত্মসচেতনতার দিক থেকে । একটু খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে বাঙালি আসলে অস্কার জয়ী , বিশ্ববন্দিত চলচ্চিত্রকারকেই স্মরণ করছে । তাঁকে স্মরণ করছে যিনি বাংলা সংস্কৃতিকে শেষবারের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছিলেন । এবং যেহেতু এর সাথেই তিনি ছিলেন লেখক ,শিল্পী ইত্যাদি তাই ঐ সত্তাগুলিকেও স্মরণ করছে যদিও মূল সম্মান অর্পিত হচ্ছে তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতির প্রতি । একদিকে যদিও এটাই স্বাভাবিক এবং দীর্ঘ ঔপনিবেশিকতার স্বাভাবিক পরিণতি । একবারও কিন্তু বলতে চাইছি না যে যাঁরা ষাট , সত্তর , আশি , নব্বইয়ের দশকে কিশোরবেলা ও যৌবন কাটিয়েছেন তাঁদের লেখক সত্যজিত সম্বন্ধে হৃদয়ের উত্তাপ নেই । আছে । কিন্তু সেই উত্তাপ এতটা নয় যে সে কারণে এত এত পত্রিকা , বই ও লেখা প্রকাশিত হবে । যদি ঐ অস্কার না থাকতো তবে কতটা উত্তাপ অবশিষ্ট থাকতো তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে । যেমন গোল্ডেন বেয়ার পাবার আগে কতজন তাঁর ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন আর পরে কতজন এই অনুপাতটা বাঙালির সংস্কৃতি চেতনার শেষ লিটমাস পরীক্ষা হয়ে রয়ে গেছে । আগেরটি অবশ্যই প্রাক নোবেল ও নোবেলোত্তর মুগ্ধতা ।
যাই হোক নানান দিক থেকে সত্যজিতকে যে ফিরে দেখা হচ্ছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা । শুধু স্রষ্টার সম্মানের জন্য নয় এটা বাংলার সংস্কৃতি বলতে যা বোঝায় তার জন্যও সবচেয়ে বড় ঘটনা । একথা কেন বলছি ? তার কারণ হল উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী থেকে মান্য বাংলা সংস্কৃতি বলতে যা বোঝায় তার প্রায় পুরোটাই বেঙ্গল রেনেসাঁ বা বাংলার আলোকপ্রাপ্তির ফসল । হ্যাঁ এর ভিত্তিভূমিতে লোকজ ও দেশীয় ঐতিহ্য নিশ্চয়ই ছিল কিন্তু প্রথমতঃ সেই উপাদানগুলো ছিল অনুপাতে কম এবং দ্বিতীয়তঃ লোকজ উপাদানও প্রতীচ্যের কষ্টিপাথরে উত্তীর্ণ হবার পরই উপাদান হিসেবে গৃহীত হয়েছিল । এর ঔচিত্য নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক বাস্তব হল এমনটাই হয়েছিল ।
এই বাংলা রেনেসাঁ হয়তো নগরে প্রান্তরে যারা কাজ করে , জনসংখ্যার সেই অধিকাংশকেই স্পর্শ করতে পারেনি কিন্তু যাঁরা নতুন সমাজের নেতা , সেই শিক্ষিত মধ্যবিত্তকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছিল । শিক্ষিতজনকে দিয়েছিল যুক্তিবাদী মনন , সপ্রশ্ন দৃষ্টিকোণ , সংস্কারমুক্ত মন , উচিত - অনুচিত ও শোষক - শাসিত সম্পর্কে নির্মোহ অবস্থান , বিজ্ঞানমনস্কতা , জানবার অসীম তৃষ্ণা , এমন আরো অনেক অনেক কিছু । এই আলোর বন্যায় একদিকে যেমন ঐতিহ্যের জগদ্দল পাথরটাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার দরকার পড়লো যেটা আমরা দেখি বিবেকানন্দর মধ্যে তেমনই রেনেসাঁর স্বাভাবিক সন্তান হিসেবে উনবিংশ শতকে জন্ম নিয়েছিল ডিরোজিওপন্থীদের প্রগতিশীল নৈরাজ্য । এবং বিংশ শতকের পাঁচ , ছয় ও সাতের দশকের বস্তুবাদী রাজনৈতিক দর্শনের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হিসেবেও বাংলা রেনেসাঁকে চিহ্নিত করা সম্ভবত ভুল হবে না । সত্যজিত এই বেঙ্গল রেনেসাঁরই সন্তান ।
পারিবারিকভাবে প্রগতিশীল ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ , উপেন্দ্রকিশোর ও সুকুমারের বিজ্ঞান ও শিল্পকলার উত্তরাধিকার , যৌবনের প্রারম্ভে রবীন্দ্র সাহচর্যে শান্তিনিকেতনে কিছুকাল কাটিয়ে আসা একই সাথে নন্দলাল ও ইউরোপীয় আর্ট ফর্মের শিক্ষা , ইংরেজি সাহিত্য ও হলিউড চলচ্চিত্র তাঁর মনন তৈরী করে দেয় । তাই তাঁর ছবি , লেখা , চলচ্চিত্র প্রথম থেকেই ভারতীয় বাহুল্যবর্জিত , বাস্তবসম্মত , নৈসর্গিক , মননশীল , মানবিক ও রোমান্টিক । তাঁর সকল সৃষ্টির মূল সুর হয়ে বেজেছে মানবিকতা , অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধা , যুক্তিবাদ , দ্বন্দ্ব , রোমান্টিসিজম ইত্যাদি রেনেসাঁ বৈশিষ্ট্যর একটি বা একাধিক সুর । একটু খেয়াল করলেই তাঁর চলচ্চিত্রে আমরা এই একবিংশ শতাব্দীতেও প্রাসঙ্গিক দ্বন্দ্বের দেখা পাব যা হয়তো গত শতকের সাতের দশকে যান্ত্রিক বস্তুবাদীরা ক্ষীণদৃষ্টির কারণে দেখতে অপারগ ছিলেন । বাঙালি ভদ্রলোক বলতে বিংশ শতকে যা বোঝাতো তিনি ব্যক্তি জীবনে ছিলেন তাই । আর তাঁর সৃষ্টিতে মান্য বাংলা সংস্কৃতি বলতে যা বোঝায় যা কিনা বাংলা রেনেসাঁর ফসল তারই উদ্ভাস ও উদযাপন ।
সত্যজিতের সৃষ্টিকে ফিরে দেখার অর্থ তাই বাংলার রেনেসাঁ সংস্কৃতিকেই ফিরে দেখা । যে সংস্কৃতি বিশ্বায়ন পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল , সংকীর্ণ মৌলবাদী আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে মুমূর্ষু । প্রতিরোধ সংগ্রামে তাই রবীন্দ্র সাহিত্যের সাথে সত্যজিতের শিল্পও সবচেয়ে শক্তিশালী আয়ুধ । রবীন্দ্রনাথের নোবেলের মত সত্যজিতের অস্কার এবং সেই কারণে বাজারে বিক্রয়যোগ্যতা অবশ্যই এই আয়ুধকে অধিকতর শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছে ও করছে ।
আমরাও সত্যজিতকে সীমিত সাধ্য নিয়ে ফিরে দেখার চেষ্টা করেছি । জানি এই প্রচেষ্টা ভীষণরকমই অসম্পূর্ণ । তবু এই অসম্পূর্ণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরাও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের সংগ্রামে আমাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবদান রাখলাম । প্রণাম জানাই বাংলা রেনেসাঁর শেষ প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বকে ।
প্রিয় পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা ।
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
সূচিপত্র
বিশেষ প্রবন্ধ
স্মৃতির আলোয়
সোনার কলম
অবাক চোখে
ছন্দে ছড়ায়
লিমেরিক
Subscribe to:
Posts (Atom)
0 comments:
Post a Comment